ঈদের ছুটিতে
একদিনেই বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দর্শন
ডান হাতের ওপর মাথা রেখে পা টান করে শুয়ে আছেন গৌতম বুদ্ধ। খোলা চোখে পৃথিবীর সব প্রাণীর প্রতি সুদৃষ্টি রাখছেন তিনি। চোখের দিকে তাকালে মনে হবে যেন আশীর্বাদ দিচ্ছেন। বুদ্ধের এই মূর্তিটি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি গ্রামের বৌদ্ধবিহারে অবস্থিত।
কক্সবাজারের সন্নিকটে রামু উপজেলা। দূরত্ব খুব বেশি হলে ১৫ কিলোমিটার। সিএনজিযোগে গেলে তো কথাই নেই, মাত্র মিনিট ত্রিশের মধ্যেই পৌঁছানো সম্ভব। প্রাচীন সব বৌদ্ধ পুরাকীর্তির জন্য বিখ্যাত উপজেলাটি। এখানে আছে বেশ কিছু উপাসনালয়। এখানকার মন্দিরে হাজার বছরের পুরোনো মূর্তির দেখাও মিলবে। তাই ঈদের ছুটিতে আপনি অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন রামুর প্রাচীন সব বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দর্শন করে। আর সব পুরাকীর্তিগুলো রামুতেই অবস্থিত বিধায় একদিনেই সব নিদর্শনই ঘুরে দেখতে পারবেন।
যেসব নিদর্শন দেখতে পারবেন
রামুতে ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে বৌদ্ধ মন্দির, বিহার ও চৈত্য-জাদি উল্লেখযোগ্য। রামুতে প্রায় ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির বা ক্যাং ও জাদি রয়েছে। বৌদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে রামুর লামারপাড়া ক্যাং, কেন্দ্রীয় সীমা বিহার (১৭০৭ বাংলা), শ্রীকুলের মৈত্রী বিহার (১৯৮৪ বাংলা), অর্পন্নচরণ মন্দির, শাসন ধ্বজামহাজ্যোতিঃপাল সীমা (১২৮৯ বাংলা), শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার, শ্রীকুলেরচেরেংঘাটা বড় ক্যাং, (রোয়াংগ্রী ক্যাং ১৮৮৫) সংলগ্ন মন্দিরসমূহ, দক্ষিণ শ্রীকুলের সাংগ্রীমার ক্যাং সংলগ্ন মন্দিরসমূহ, রামকৌট বনাশ্রম বিহার উল্লেখযোগ্য। পূর্ব রাজারকুল বৌদ্ধ বিহার, চাতোফা চৈত্য-জাদি, উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞা বনবিহার সংলগ্ন মন্দিরও বেশ সুন্দর।
তা ছাড়া উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় ১০০ ফুট লম্বা গৌতম বুদ্ধের সিংহশয্যা মূর্তি দেখে থমকে দাঁড়াতে হয়। স্থানীয়দের মতে, এটি এশিয়ার সবচেয়ে বড়। ২০০৬ সালে সোনালি রঙের মূর্তিটি একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরির কাজ শুরু করেন শ্রীমৎ করুণাশ্রী ভিক্ষু। ২০০৯ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। মিয়ানমার থেকে আসা দক্ষ একজন শিল্পীর সঙ্গে নিজেই স্থপতি হিসেবে কাজ করেন তিনি। করুণাশ্রী ভিক্ষু প্রায় দুই একর জায়গায় ২০০২ সালে বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র বৌদ্ধবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মূর্তিটি তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর। বৌদ্ধবিহারের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে ৮৮ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই দেখা মিলবে ‘ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি’। এর পাশেই সবুজের সমাহার। বলা যায়, বন-পাহাড়-সমতলের মিলনমেলা যেন। প্রায় কোটি টাকা খরচে নির্মিত মূর্তিটি দেখতে শ্রীলঙ্কা, বার্মা, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটকরা নিয়মিত আসেন এখানে।
রামুর এই বৌদ্ধ ঐতিহ্য (Ramu Buddhist Vihara) অতীতকাল থেকে গৌরবময় সাক্ষ্য বহন করে আসছে। রামকোট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার চৌমুহনী স্টেশন ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে, রাজারকুল এলাকায় পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। এর দুই কিলোমিটার দূরে অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীতে নতুন করে নির্মিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সীমাবিহার। কিছুটা দক্ষিণে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধবিহার। আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় বৌদ্ধবিহার। তবে বলে রাখা ভালো শুধু ‘ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি’ এখানে ছবি তুলতে পারবেন। অন্য জায়গাগুলোতে অনুমতি সাপেক্ষে ছবি তুলতে হবে।
যেভাবে যাবেন
রামুর প্রাচীন সব বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দর্শন করতে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। বাসভাড়া ঢাকার থেকে ৮০০ থেকে ২২০০ টাকা । তাই দেশের যে প্রান্তেই থাকুন প্রথমেই চলে আসুন কক্সবাজার। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিনিবাসযোগে চলে আসুন রামুতে। সেখানে ঘণ্টা চুক্তিতে নিয়ে নেন ট্যাক্সি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বা টমটম। অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গেও যেতে পারবেন গন্তব্য স্থানে। তবে গাড়ির ড্রাইভারকে আশপাশের সব বৌদ্ধ পুরাকীর্তি দেখাতে হবে তা বলে নেওয়া ভালো। ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। ‘ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধমূর্তি’ দর্শনের ক্ষেত্রে ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য।