শীতে ঘোরাঘুরি
চলুন যাই উজিরপুরের শাপলা বিলে
সাতলা ইউনিয়নটি সবার কাছে সাতলা বিল নামেই পরিচিত। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত একটি এলাকা সাতলা। বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানিবেষ্টিত থাকে এলাকার ঘরবাড়ি। সেখানকার মানুষজন নৌকা, তালের ডোঙ্গা কিংবা কলার ভেলায় যাতায়াত করে থাকে।
বিলের মধ্যে খুবই কম ঘরবাড়ির দেখা মেলে। এলাকার বেশির ভাগ মানুষ সারা বছরই বিলের মাছ আহরণ ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সাতলা বিলের সুস্বাদু কই মাছ সারা দেশে পরিচিত।
শরতের সকালে সূর্য ওঠা শিশির ভেজা ভোরে লাল শাপলাগুলো হাসিমুখে পর্যটকদের মন জুড়িয়ে দেয়। শাপলার রাজ্য যেন সূর্যের লাল আভাকেও হার মানায়। যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমী মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। যখন ছোট ছোট নৌকায় করে ধীরে ধীরে শাপলা বাগানের মধ্য দিয়ে চলবেন, তখন উৎফুল্ল হয়ে উঠবে আপনার মন।
কয়েকবছর আগেও সাতলা এলাকা শুধু বিল হিসেবেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে পুরো বিল এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জনপ্রিয় পর্যটন স্পট ‘লাল শাপলা বিল’ নামে পরিচিত। জানা গেছে, শত বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে সাতলা, বাগদা, হারতা, পয়সারহাট, আগৈলঝাড়াসহ বেশ কয়েকটি বিলে লাল শাপলা ফোটে।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে সাতলা লাল শাপলা বিলের খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। সাতলা এলাকা আজ সারা দেশের মানুষের কাছে লাল শাপলার বিল নামে পরিচিতি লাভ করেছে। কয়েক বছরে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে।
পশ্চিম সাতলা স্থানে পর্যটকদের জন্য ভাড়ায় চালিত নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে লাল শাপলার বিল টুরিস্টদের কাছে পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে। এখানে লাল শাপলা ছাড়াও সাদা ও বেগুনি শাপলার দেখা মেলে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিন সকালে ভিড় জমাচ্ছেন এই বিলে।
যত দূর চোখ যায়, শুধুই লাল শাপলার রাজ্য। লতা-পাতা, গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত সহস্র লাল শাপলা হার মানিয়েছে সূর্যের আভাকেও।
বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের এই বিলে দেখা মিলবে চোখ জুড়ানো এমন দৃশ্যের। প্রকৃতির বুকে আঁকা এ যেন এক নকশি কাঁথা।
কখন যাবেন
মূলত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে বেশি শাপলা ফোটে। তবে যেদিনই যান না কেন, অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে। কারণ, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলা ফুল বুজে ছোট হয়ে যায়। তাই এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়।
কীভাবে যাবেন
লঞ্চ কিংবা বাসে ঢাকা থেকে বরিশাল যাবেন। বরিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি সাতলা বাস সার্ভিস চালু রয়েছে (ভাড়া ৬০ টাকা)। এ ছাড়া বরিশাল থেকে মাহিন্দ্রা বা সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও সাতলা যেতে পারেন। নয়াকান্দি নৌকাঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে ঘুরতে পারেন শাপলার বিলে (ভাড়া ৫০০ টাকা)।
থাকা-খাওয়া
সাতলা বিলে থাকা-খাওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। শুকনো খাবার ব্যাগে রাখবেন। তবে গ্রুপ নিয়ে গেলে স্থানীয় বাসায় রান্না করতে চাইলে সাহায্য পাবেন। এখানকার মানুষজন খুবই অতিথিপরায়ণ। চাইলে নিজেরাও বাজার থেকে বিলের মাছ কিনে মাঝির বাড়িতে রান্না করতে পারবেন। খাবার হোটেলের জন্য যেতে হবে পাশের এলাকা হারতা বন্দর বাজারে।
মনে রাখবেন
অযথা শাপলা ফুল ছিড়ে বিলে ফেলে আসবেন না। আপনার কারণে যেন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি না হয়। আপনার চিপস, চকলেট ও প্লাস্টিকের বোতল নৌকায় নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।