আইরিশ ইতিহাস সমৃদ্ধ ডাবলিন ক্যাসল

Looks like you've blocked notifications!
আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের অন্যতম স্থপনা ডাবলিন ক্যাসল। ছবি : এনটিভি

আইরিশ ইতিহাস-ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী আয়ারল্যান্ডের ‘ডাবলিন ক্যাসল’। বিশ্বের প্রাচীনতম ঐতিহ্যের সমৃদ্ধিশালী দেশ আয়ারল্যান্ডের প্রাচীন এই দুর্গ দিন দিন পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। হাজার বছরের অতীত ইতিহাস, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে আয়ারল্যান্ড এতই দরদ নিয়ে আগলে রেখেছে যে তা স্বচোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। সুন্দর শহর ডাবলিনে সবাইকে আকৃষ্ট করার মতো উল্লেখযোগ্য একটি স্থাপনা ডাবলিন ক্যাসল।

ক্যাসল (castle) ইংরেজি শব্দটির বাংলায় হয় দুর্গ, কেল্লা বা সুরক্ষিত প্রাসাদ। প্রাচীন আমলে রাজা-বাদশাদের আবাসস্থল হিসেবেই ব্যবহার হতো এই দুর্গ। হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করে এখনো অনেক দুর্গ স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। ডাবলিন ক্যাসলের সংরক্ষিত সব পুরোনো জিনিসপত্র দেখে পৃথিবীর কোনো বিখ্যাত মিউজিয়ামের মতই মনে হয়। এর বিশালত্ব, দেয়ালের অলংকরণ, অমূল্য স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রের সম্ভার যেকোনো মানুষকেই অবাক করে দেওয়ার মতো।

১২০৪ সালে ইংল্যান্ডের রাজা জন মূলত শহর প্রতিরক্ষা, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এবং সম্পদের নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী দুর্গ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজার কথামতো ১২৩০ সালের মধ্যে গড়ে ওঠে ইউরোপসেরা ডাবলিন ক্যাসল। গত ৮০০ বছরের আইরিশ ইতিহাস মাথায় নিয়ে এখন ঠায় দাঁড়িয়ে এই দুর্গ। প্রায় ১১ একর জায়গাজুড়ে থাকা ডাবলিন ক্যাসলের ভেতরে দর্শনার্থীর জন্য রয়েছে দুটি করে মিউজিয়াম, ক্যাফে ও আধুনিক মানের বাগান এবং বড় কনফারেন্স হল ও বারান্দা। এ ছাড়া দুর্গের চারপাশের দেয়ালের আছে বাহারি আলপনা।

গত ৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আমার বন্ধু আয়ারল্যান্ডের বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব হামিদুল নাসেরের আমন্ত্রণে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর সে সুযোগে আমার পরিবার-পরিজনসহ ডাবলিন ক্যাসলটি ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল। ক্যাসলে ঢুকতেই চোখে পড়ে এর উদ্যোক্তা রাজা জনের প্রতিকৃতি। দলবেঁধে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় দেখে বোঝার বাকি ছিল না এটি বেশ জনপ্রিয়। ডাবলিন শহরের প্রাণকেন্দ্র সাগার থেকে বেয়ে আসা কিজ নদীর পাড় থেকে হেঁটে ৩ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম ডাবলিন ক্যাসলে। প্রধান ফটকের ডান পাশে রয়েছে বিশাল একটি স্টল। সেখানে ক্যাসলের ইতিহাস-ঐতিহ্যে নিয়ে দর্শনার্থীদের কেনাকাটার জিনিসপত্র। ক্যাসলের সামনে বিশাল খালি জায়গা পাথরের প্রাচীর ঘেরা। জানা গেল, আগের দিনে সৈন্যরা তাদের অস্ত্রসহ যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে এখানে অবস্থান নিত। বর্তমানে ক্যাসলের যে স্থানটি অভ্যর্থনা ও ডাইনিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সে স্থানে একসময় ছিল কারাগার।

ডাবলিন ক্যাসল আইরিশ জাতিসত্তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক একটি সম্পদ হিসেবে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে। আইরিশদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার, পতাকাসহ প্রায় সবকিছুই। কিন্তু সবকিছুতে স্বাধীন হলেও তারা ভাষাগত দিক দিয়ে স্বাধীন নয়। আইরিশ ভাষাটা এখনো তাদের হৃদয়েরই ভাষা, কিন্তু সব জায়গায়ই ব্যবহার হচ্ছে ইংলিশ। পড়ন্ত বিকেলের ঠান্ডা বাতাসে হেঁটে হেঁটে পুরো শহর ঘুরে দেখলাম। শহরটির সব স্থানেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আছে।

রাতের আলোতে ডাবলিন শহরকে দিনের চেয়েও সুন্দর মনে হয়। আলো ঝলমল রাতের আঁধারে শত শত পর্যটক ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করেন।

জানা গেছে, সপ্তাহের সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল পৌনে ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে ডাবলিন ক্যাসল। ছয় ইউরো হলো ক্যাসলের প্রবেশমূল্য। যাঁরা দেশের বাইরে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে আয়ারল্যান্ড ঘুরে আসতে পারেন।