মন ভোলানো মনপুরা
প্রমত্তা মেঘনা নদীর পলিবিধৌত ছোট্ট জনপদ মনুপরা। ভোলা জেলার মনপুরার প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ। চারদিকে পানি, সবুজে সবুজে ভরপুর এর নীরব জনপদ এই মনপুরা। সবুজ এখানে পাখা মেলে, নীরবতা এখানে শাসন করে আর পানি তার অপার আদর দিয়ে ঘিরে রাখে মনপুরা দ্বীপকে। শীতে তার এক রূপ আবার বর্ষায় পুরো পাল্টে যায়, তখন মনপুরা ধারণ করে আরেক রূপ। দুটোতেই অপরূপ হয়ে ওঠে মনপুরা।
লক্ষাধিক লোকের বসবাস দ্বীপ মনপুরায়। মনপুরায় ষোড়শ শতাব্দীতে বসতি গড়ে ওঠে বলে ধারণা ইতিহাবিদদের। মনে করা হচ্ছে, প্রায় ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এখানে সর্বপ্রথম পর্তুগিজ জলদস্যুরা আস্তানা গেড়েছিল। কালক্রমে এখান থেকে পর্তুগিজ জলদস্যুরা চলে যেতে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে প্রায় ১৮০০ শতাব্দীতে মানুষ মনপুরায় আস্তে আস্তে বসতি গড়তে শুরু করে। সময়ের বিবর্তনে সেই মনপুরা লাখো লোকের একটি জনপদ। এখানকার মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই পেশা ব্যবসা। একটু সময় ও সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন মনপুরা।
কীভাবে যাবেন
একমাত্র উপায় জলপথ। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে একটি লঞ্চ ছাড়ে হাতিয়ার উদ্দেশে। তাতে উঠে পরদিন সকাল ৭টায় মনপুরা নেমে যেতে পারবেন। একটি লঞ্চের নাম জানা আছে। ফারহান ৩ এবং ফারহান ৪ (একেক দিন একেকটা ছাড়ে)। ফোন : এমভি ফারহান ৩ : ০১৭৮১-৩৫৪২০১, এমভি ফারহান ৪ - ০১৭৮৫৬৩০৩৬৮। ভাড়া : ডেক ৩০০ টাকা। কেবিন ১২০০ টাকা সিঙ্গেল, ২২০০ টাকা ডাবল।
সকাল ৭টার দিকে লঞ্চ থামবে মনপুরার রামনেওয়াজ ঘাটে। এখানে না নামাই ভালো, নামুন আধা ঘণ্টা পরের স্টপেজ হাজিরহাটে। এরপর একটা রিকশা নিয়ে চলে যান বাজারে।
কী আছে মনপুরায়
আসলে পুরো মনপুরাটাই দেখার মতো। দু-একটা দিন নির্জনে পানি আর সবুজের মাঝে শপে দিতে মনপুরা চলে যান। লঞ্চ সকাল ৭টার দিকে পৌঁছে যাবে মনপুরায়। তার আগেই শুরু হবে আপনার রোমাঞ্চের। যদি আপনি আরলি রাইজার হন, তবে বাইরে তাকান। বুঝবেন অকূল পাথার কী জিনিস। লঞ্চ একপর্যায়ে এমন এক জায়গায় আসবে, চারদিকে পানি ছাড়া কিছু নেই। নদীও এত বড় হতে পারে আপনার হয়তো ধারণাতেও আসবে না। একটা সময় বিন্দুর মতো মনপুরা দেখা যাবে।
মনপুরায় দেখার মতো আছে মাইলের পর মাইল সবুজ গাছপালা। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। এই চরগুলো হলো চর তোজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চর নিজাম, চর সামসুদ্দিন, লালচর, ডালচর, কলাতলীর চর ইত্যাদি। মনপুরা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে মনপুরা ফিশারিজ লি.। ২১০ একর জমিতে গড়ে ওঠা খামারবাড়িটি দেখে আসুন। বন বিভাগের চেষ্টায় গড়ে উঠেছে ম্যানগ্রোভ বাগান। এসব বাগানে হরিণও দেখতে পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভালো হয়, একটা মোটরসাইকেল ভাড়া নিন সারা দিনের জন্য। ওরাই ঘুরিয়ে দেখাবে সব।
কোথায় থাকবেন
ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা মনপুরা। চোর ডাকাতের বালাই নেই। আছে আদিগন্ত ভূমি। নদীর পাড়ের একটা ভালো জায়গা দেখে তাঁবু ফেলে নিন। পড়শিদের সঙ্গে রফা করে রান্নার আয়োজন করতে পারবেন। আর যাঁদের তাঁবু নেই, তাঁরা বাজারের হোটেল সীমায় থাকতে পারেন। এ ছাড়া অনুমতি নিয়ে সরকারি ডাকবাংলোতেও থাকতে পারেন।
সতর্কতা
মনপুরা একটি ডুবো এলাকা। তাই সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট নিন। ক্যাম্পিং করলে প্রশাসনকে জানিয়ে রাখুন।