সিপ্পি আরসুয়াং, রহস্য পাহাড়, রনিনপাড়ার টাইমলাইন
ফেসবুকের কল্যাণে আজকাল আর কোনো দুর্গম জায়গায় যাওয়ার আগে সেখানকার হাল-হদিস নিয়ে খুব বেশি চিন্তাভাবনার দরকার পড়ে না। ভ্রমণ-সংক্রান্ত নানা গ্রুপ থেকেই মোটামুটি ভ্রমণের একটা খসড়া তৈরি করে ফেলা যায়। চলতি বছরের ১৩ জুন রাতে আমরা কয়েকজন যাত্রা করলাম বান্দরবানের দুর্গম এক পাহাড়ের পথে। সিপ্পি আরসুয়াং নামের ২৯৩৯ ফুট উচ্চতার এই পাহাড় বান্দরবানের পূর্বপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে এক মোটামুটি দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ওই পাহাড়ে ওঠা এবং সেই সঙ্গে আশপাশের দ্রষ্টব্য স্থানগুলোও সম্ভব হলে পরখ করে আসা।
প্রথম দিন
ঢাকা থেকে বান্দরবান বাসে পৌঁছালাম। সেখান থেকে নড়বড়ে এক বাসে করে পৌঁছালাম রোয়াংছড়ি উপজেলায়। আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাইড জেমসন এখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাদের মধ্যে কারোরই পাহাড়ে হাঁটার বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল না। রোয়াংছড়ি বাজার থেকে পাহাড়ে হাঁটার উপযোগী ভালো গ্রিপের স্যান্ডেল আর অন্যান্য টুকিটাকি কিনে নিলাম। তারপর যাত্রা শুরু হলো।
রোয়াংছড়ি থেকে আমাদের গন্তব্য রনিনপাড়া। রনিনপাড়া চান্দের গাড়িতে যাওয়া যায়, আবার হেঁটেও যাওয়া যায়। পাহাড়ের স্বাদ-গন্ধে মিশে যেতে চাই, তাই পায়ে হেঁটে যাওয়াই মনস্থির করলাম। রোয়াংছড়ি বাজারের পাশ ঘেঁষে গাইড আমাদের নিয়ে সোজা নামলেন এক পাহাড়ি ছড়ায়। আগের দিনই বৃষ্টি হওয়ায় ছড়ায় ভরভরান্তি পানি। ছড়ার বুকে ছড়িয়ে আছে অগুনতি ছোট থেকে মাঝারি আকৃতির পাথর। দুই পাশে কখনো ঘন ঝোপঝাড়, আবার কখনো খাড়া উঠে গেছে পাহাড়। ঝোপঝাড়ে ঠাসা সেই পাহাড় থেকে ভেসে আসছে পোকামাকড় আর পাখির অর্কেস্ট্রা। এরই মাঝ দিয়ে আমরা হেঁটে চললাম। খানিক এগোতেই চোখে পড়ল জনা দুই পাহাড়ি একটা বাঁশের লাঠি দিয়ে জলের ওপর বেদম জোরে বাড়ি মারছে। কাছাকাছি যেতেই বোঝা গেল, তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু একটি ফুট তিনেক দৈর্ঘ্যের সাপ। আমরা কিছু বলার আগেই ধারালো মাশেত্তে (এক রকমের ছোরা) দিয়ে সাপটির মাথা ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো।
যাত্রাপথের বাকি পথটা মোটামুটি নিস্তরঙ্গ বলা চলে। ছড়া পার হয়ে আমাদের উঠতে হলো পাহাড়ে। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথের দুই পাশে কখনো ঘাসের বন, কখনো সেগুনগাছের বাগান, আবার কখনো আগাছার জঙ্গল। পার্বত্য অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য জুমঘর মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ছিল। এভাবে ঘণ্টা চারেক হাঁটার পর আমাদের সামনে ধরা পড়ল এক অপূর্ব দৃশ্য, আমাদের সামনের রাস্তা খাড়া নিচে নেমে গেছে আর ডান পাশে বেশ দূরে উঁকি দিচ্ছে কেওক্রাডংয়ের চূড়া। সূর্যের আলো পড়ে আসছিল, তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে আমরা আবার হাঁটা ধরলাম। সন্ধ্যার আগে আগে এসে পৌঁছালাম রনিনপাড়ার মুখে। রনিনপাড়া পৌঁছানোর খানিক আগে বেশ পিচ্ছিল একটা রাস্তা দিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়। এটুকু বাদে সারা পথে বলতে গেলে কোনো সমস্যাই হয়নি। পুরো ঝাড়া ২৭ কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে শরীর মন সবই যে ভীষণ ক্লান্ত, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। পথে অবশ্য পাইক্ষুংপাড়ায় যাত্রাবিরতি করেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য।
রনিনপাড়াটি বেশ দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত হলেও ছবির মতো সুন্দর। সব বাড়িই কয়েক ফুট উঁচু খুঁটির ওপরে অবস্থিত। বেশ কয়েকটি ঘরে সোলার প্যানেলের কল্যাণে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে দেখলাম। টিমটিমে আলো জ্বললেও এই পাহাড়ের মাথায় তা নিঃসন্দেহে দারুণ প্রয়োজনীয়। এখানে পানির সমস্যাও নেই। সিপ্পির গা বেয়ে নেমে আসা ঝিরিগুলো থেকে লোহার পাইপে করে পানি এনে সরবরাহ করা হয় গোটা গ্রাম জুড়ে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখার জন্য চৌবাচ্চা তো আছেই। গোসল করে খেয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
দ্বিতীয় দিন
সিপ্পি আরসুয়াংয়ের দিকে যাত্রা শুরু করলাম সকাল ৯টার দিকে। আমাদের একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, তাই সূর্যের তাপে একটু বেশিই ভুগতে হলো। আমাদের গাইড কয়েকটা বাঁশের লাঠি তৈরি করে দিয়েছিল। তাই নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম খালি পেটে। আধাঘণ্টা হাঁটার পরেই আমাদের দুজন যাত্রায় ক্ষান্ত দিয়ে রনিনপাড়া ফেরত গেল। আমরা বাকিরা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পৌঁছালাম দেবাছড়াপাড়ায়। এখানেই একটা ঘরে বসে সঙ্গে করে আনা নুডলস আর স্যুপ খেয়ে নিলাম। সামনের পথ আরো দুর্গম। সিপ্পি যেতে আসতে সব মিলিয়ে আট ঘণ্টা লাগে। পথের পুরোটাই ঘন জঙ্গল। গাইড সঙ্গে করে দা নিয়ে এসেছিল। তাই দিয়ে পথ কেটে কেটে এগুতে থাকলাম আমরা। এভাবে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার মতো পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম সিপ্পির চূড়ায়। এখানে নাকি আগে ব্রিটিশদের একটা ক্যাম্প ছিল। রনিনপাড়ার আগমুহূর্তে একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়, ওটা থেকে সিপ্পি দেখা যায়। সিপ্পির চূড়া থেকে আশপাশের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড়রাজির সৌন্দর্য দেখে নিলাম মন ভরে। তারপর ফেরার পালা। সেই একই রাস্তা ধরে কাঁটার খোচা, কাদা আর জোঁকের কামড় সয়ে হোঁচট খেতে খেতে ফিরে এলাম। দেবাছড়াপাড়ায় কেজি খানেক বুনো জাম সাবড়ে দিয়ে ফিরে এলাম রনিনপাড়ায়। পুরো যাত্রায় এই সিপ্পির পথটাই ছিল সবচেয়ে কষ্টকর।
যাওয়ার পথে গাইডের মুখ থেকে শুনলাম, সিপ্পির চূড়ার জঙ্গলে নাকি বাঘ থাকে। বর্ণনা শুনে মনে হলো চিতাবাঘ। অবশ্য ক্লাউডেড লেপার্ড বা আমচিতা হওয়াও বিচিত্র নয়। এ ছাড়া ওই জঙ্গলে নাকি হরিণ আর শূকর বেশ সহজলভ্য। আমার মূল আগ্রহ ছিল বাঘের ব্যাপারটায়। গাইডের ভাষ্যমতে, গত বছর ডিসেম্বরের দিকে নাকি সিপ্পির জঙ্গলে পেতে রাখা ফাঁদে হরিণ ধরা পড়েছিল। পরে শিকারিরা সেই হরিণ আনতে যেয়ে ভুক্তাবশেষ খুঁজে পায়। তবে নিজের চোখে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কেউই বাঘ দেখেনি।
তৃতীয় দিন
পরপর দুদিন বেদম হাঁটাহাঁটি করার ফলে সবারই পা ব্যথা। তাই ঠিক করলাম, তৃতীয় দিন আর বেশি ঘুরব না। গাইড জানালেন, রনিনপাড়ার কাছেই একটা ঝরনা রয়েছে। চাইলে আমরা ওটা দেখে আসতে পারি। সকালবেলা খেয়েদেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও গাইড পিঠে একটা এয়ারগান ঝুলিয়ে নিল, পাখপাখালি মারার লক্ষ্যে। যা হোক, রনিনপাড়া থেকে বের হয়ে কিছুটা রাস্তা পার হওয়ার পরই আমাদের পথ রোধ করে দাড়াঁল এক দুর্ভেদ্য বাঁশবন। আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় মাটি ভেজা, আর বাঁশবনের পুরোটাই একটা পাহাড়ের ঢাল জুড়ে অবস্থিত। এর মাঝে মাঝে আবার মাথা তুলেছে বুনো কলাগাছের ঝাড়। ঢালুপথে সেই ঘন ঝাড় পেরিয়ে হাঁটা এক দুঃসাধ্য ব্যাপার। গাইড যদিও মাঝেমধ্যেই দা দিয়ে কেটে জঙ্গল পরিষ্কার করছিলেন।
বাঁশবন শেষ করার পর আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়াল এক পাথুরে ঝিরি। পিচ্ছিল সেই ঝিরিপথে হাঁটা খুবই কষ্টকর। শ্যাওলা-ঢাকা পাথরে আছাড় খেয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর পথ খুবই প্রশস্ত। গাইড নির্বিকার। তিনি দিব্যি মোজা পায়ে ওই সব এলাকা পার হয়ে যেতে থাকলেন। আমরা কোনোরকমে তার পিছুপিছু হেঁটে চললাম। দু-একটা আছাড়ও যে খাইনি এমন নয়, তবে ভাগ্যক্রমে সেগুলোর কোনোটাই বিপজ্জনক ছিল না। এভাবে চলতে চলতে চোখে পড়ল ঝিরির পাশে পাথরের গায়ে একটা পাখির বাসা। ভেতরে চারটি ডিম। ডিমগুলো সাদা, ওপরে খয়েরি কালো ফুটকি। চিনতে পারলাম না কোন পাখির ডিম। এখানে এসে প্রকৃতি সংরক্ষণ বিদ্যা কাজে লাগল। গাইড ডিমগুলোকে বাসায় নিয়ে যেতে ইচ্ছুক! অনেক বলেকয়ে বোঝালাম, বন্য প্রাণীদের ডিম বাচ্চা না খেয়ে বাঁচিয়ে রাখলে আখেরে তাদেরই লাভ হবে। অনিচ্ছুক মুখে গাইড আমাদের কথা মেনে নিলেন।
পাখির বাসা পেরিয়ে কিছুদূর হাঁটতেই চোখে পড়ল সেই ঝরনা। জায়গাটা অনেকটা গোলাকার পেয়ালা আকৃতির, পেয়ালার মাঝ দিয়ে পানির ধারা নেমে এসেছে। আর দশটা ঝরনার মতোই পানির তোড়ে ভেসে আসা কাঠকুটো আর গাছের গুঁড়িতে জায়গাটা সয়লাব। আমরা ছবি তুললাম। নাম জিজ্ঞেস করতে গাইড জানালেন, এই ঝরনার কোনো নাম নেই, এটা পড়েছে রনিনপাড়ার নিজস্ব বনের ভেতরে, তাই সাধারণত ট্যুরিস্টদের ওঁরা এখানে নিয়ে আসেন না। নিজেদের রিজার্ভ ফরেস্টের ভেতরে পড়ায় এটাকেও তারা রিজার্ভ সাইতার (সাইতার মানে ঝরনা বা জলপ্রপাত) নামে ডাকে। জায়গাটা নির্জন, বাস্তবিকই মনে হচ্ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে এ রকম গোটাকয় ঝরনা থাকা ভালো, তাহলে অন্তত কিছু দ্রষ্টব্য স্থান বেখেয়ালি ট্যুরিস্টদের অবিমৃষ্যকারিতার হাত থেকে বাঁচে! ঝরনা দেখে আমরা ফিরে এলাম।
সেদিন বিকেলে কোনো কাজ ছিল না, তাই রনিনপাড়া ঘুরে দেখতে বের হলাম। বেশ বর্ধিষ্ণু এই পাড়ায় মূলত বম জাতির লোকদের বাস। বমরা আবার নানা রকম গোত্রে বিভক্ত। এর পাশাপাশি কয়েক ঘর তঞ্চংগ্যাও রয়েছে। রনিনপাড়ার কেন্দ্রে আছে একটা সুরম্য গির্জা। একটা বাসায় দেখলাম বেশ কিছু দাঁতালো শূকরের খুলি ঝুলছে। গাইডের ভাষ্যমতে, আশপাশের পাহাড়ে কদাচিৎ বন্য শূকর পাওয়া যায়। এগুলো ওদেরই খুলি।
চতুর্থ দিন
আজ আমাদের গন্তব্য শিয়ালু পাহাড়। দ্বিতীয় দিনই রিজার্ভ সাইতার দেখার সময় গাইড এটার কথা বলেছিল আমাদেরকে। শিয়ালু পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য হলো গোটা পাহাড়টিই পাথরের এবং খাড়া। ওঠা অসম্ভব। গাইডের ভাষায়, ‘বানরও এই পাহাড় বেয়ে উঠতে পারে না’। কাজেই পাহাড়ের মাথায় কী আছে কেউই জানে না। বেশ রহস্যমণ্ডিত মনে হলো এই শিয়ালু পাহাড়।
রনিনপাড়া থেকে আধাঘণ্টার মতো হাঁটতেই চোখে পড়ল পথের পাশে একটি বিশাল পাথরের খণ্ড। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বহু বছর আগে এই পাথরের কাছে বিশালকায় এক বন্য হাতি শিকার করা হয়ছিল। ওরা পাথরটিকে ‘হাতিমারা পাথর’ নামে ডাকে। এই পাথর পাশ কাটিয়ে একটি সরু খাদের কিনার ধরে বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে শিয়ালু পাহাড়ের পাদদেশে এসে পৌঁছালাম। এরপর বুনো কলাগাছে আবৃত ঢাল বেয়ে বেশ কিছুটা হেঁটে চলে এলাম শিয়ালুর একদম নিচে। বৃষ্টি হলে এই পাথর বেয়ে নেমে আসে পানির ধারা। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি বহু উঁচুতে, পাহাড়ের মাথায় ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গাছগাছালি। সেখানে একটা বড় আকারের শিকারি পাখিকেও উড়তে দেখা গেল তবে এত নিচ থেকে চিনতে পারলাম না।
শিয়ালু পাহাড় থেকে আমরা এক ভিন্ন পথ ধরলাম ফেরার জন্য। পূর্বে উল্লেখিত খাদের ধার ঘেঁষে আমরা চললাম ডানদিকে। পেছনে শিয়ালুর পুরো বিস্তৃতি চোখে ধরা পড়ল। মাঝে একটি জুমঘরে বিশ্রাম নেওয়ার সময় দেখলাম বন্দুক হাতে একদল পাহাড়ি শিকারি এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের গাইড একটি নীলকণ্ঠি বসন্তবৌরি আর একটি ইরাবতী কাঠবেড়ালি ঝোলায় পুরেছে। শিকারের নমুনা দেখেই বোঝা গেল এই ঘন বনে আবৃত পাহাড়গুলো অত্যধিক শিকারের কারণেই হয়তোবা বিস্ময়কর রকমের প্রাণিশূন্যতায় ভুগছে। গাইডকে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, ধনেশের মতো পাখি নাকি সে জন্মেও দেখেনি। পথে চোখে পড়ল বিশাল এক ডুমুরগাছ, ফলে ভর্তি। পাহাড়ি ধুমকলজাতীয় পাখিদের জন্য আদর্শ খাবার, কিন্তু এই গাছটিতেও কোনো পাখির উপস্থিতি চোখে পড়ল না।
যা হোক, জুমঘর পেছনে ফেলে কিছুদূর এগিয়ে যেতে আগাছার জঙ্গলে ঠাসা একটি পাহাড়ি পথ সামনে পড়ল। এটা ধরে এগিয়ে যেতে যেতেই দেখলাম বাঁদিকে সিপ্পির চূড়া দেখা যাচ্ছে। আরো খানিক এগিয়ে যেতে পাহাড়টি নিচু হয়ে একটা ঝিরিপথে শেষ হয়েছে। এবার আমাদের এগুতে হবে এই পিচ্ছিল ঝিরিধরে। ঝিরিপথটি আর সব পাহাড়ি ঝিরির মতোই পিচ্ছিল, কিন্তু খানিকটা সামনে এগুতে চোখে পড়ল এক চমৎকার দৃশ্য, সামনে ধাপে ধাপে ঝিরিটি উঁচু হয়ে গেছে, গোটা পাথুরে ঝিরিটির তলদেশ শ্যাওলায় সবুজ হয়ে আছে। আর এর ওপর দিয়েই গড়িয়ে চলেছে স্বচ্ছ পানি। দিব্যি এক প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইড তৈরি হয়ে আছে। কোনো রকম পা ফসকালেই এক চোটে নেমে নিচের জমা পানির মধ্যে এসে পড়তে হবে। পাহাড়িরা নাকি এখানে পিকনিক করতে আসে। এই ঝিরি পার হয়ে আমরা উঠে পড়লাম এক জুমক্ষেতের মধ্যে। শেষ বিকেলের আলোয় গোটা অঞ্চল অপূর্ব দেখাচ্ছিল। চোখে পড়ল পাহাড়িরা জুমচাষে মগ্ন। ফসল তোলা হয়ে গেলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আবার এরকম পাহাড়কে পাহাড় আগুনে পুড়িয়ে জুমচাষের জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেদিনের মতো ভ্রমণযাত্রার ইতি টানলাম। পরের দিন সকালে উঠে আবার ২৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রোয়াংছড়ি হয়ে বান্দরবানে এসে ঢাকার পথে যাত্রা করলাম।