দুবলার চরে রাসমেলা

Looks like you've blocked notifications!

প্রতিবছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দুবলার চরে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুবলারচর সুন্দরবনের মাঝে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ বা চর। সাগরের কোলঘেঁষা এ চরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদী। ১৯২৩ সালে হরিচাঁদ ঠাকুরের বনবাসী ভক্ত হরিভজন এ মেলা শুরু করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণ শত বছর আগে কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে পাপমোচন ও পুণ্যলাভের আশায় গঙ্গাস্নানের জন্য স্বপ্নে আদেশ পান। তখন থেকেই এ মেলার শুরু। আবার অনেকে মনে করেন, শ্রীকৃষ্ণ বনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা করেছিলেন এ কার্তিকের পূর্ণিমা রাতে। সে উপলক্ষেই এ মেলা। অসংখ্য সনাতন ধর্মাবলম্বী অংশ নেন এ মেলায়।

ক্রমেই এ মেলা এখন হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি উৎসব দেখতে আসেন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। এ উপলক্ষে এখানে গ্রামীণ মেলাও বসে। সুতরাং আর দেরি কেন। আপনি ঘুরে আসতে পারনে রাসমেলায়। তাই আপনি রাসমেলার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে পারনে । 

যেভাবে ঢাকা থেকে যাবেন
আপনার যাত্রা হতে পারে এভাবে। আপনি যদি রাতে যেতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে রাত ৮টায় (সায়েদাবাদ থেকে) মংলাগামী বাসে উঠতে হবে। ভাড়া ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া রাসমেলায় ঢাকা থেকে দুই ভাবে যাওয়া যায়। খুলনা হয়ে আর মোংলা হয়ে। এভাবে যেতে হলে আপনাকে সায়েদাবাদ থেকে মোংলার বাসে উঠতে হবে অথবা কল্যাণপুর বা গাবতলী দিয়ে খুলনার বাসে উঠতে হবে, ভাড়া ৫৫০ টাকা। তারপর রিকশাযোগে  রূপসা ঘাট, ভাড়া ২০ টাকা।     

যেভাবে রাসমেলায় যাবেন
আপনি দুভাবে রাসমেলায় যেতে পারবেন। এক. রিজার্ভ ট্যুরিস্ট বোট অথবা সাধারণ ট্রলারে, রিজার্ভ ট্যুরিস্ট বোটে যেতে হলে আপনাকে নন-এসিতে আট হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা আর এসি শিপ ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে, যা আপনাকে আরামদায়ক ট্যুর করতে সাহায্য করবে। যেখানে আপনাকে একটি শোয়ার কেবিনের বেড দেওয়া হবে। আর প্রতিবেলায় উন্নত মানের খাবারসহ বিকেলের নাশতা। ২৪ ঘণ্টা চা কফি এবং একটি বারবি কিউয়ের ব্যবস্থা থাকবে। আর ট্রলারে আপনার খরচ দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে হয়ে যাবে। সেখানে খাওয়াদাওয়ার সুবিধা ভালো নেই। ঘুমাতে হবে ট্রলারে, যা আপনার জন্য মানানসই নাও হতে পারে।
নিরাপত্তা
রাসমেলা উপলক্ষে বন বিভাগ কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আর ট্যুরিস্ট বোটে যাঁরা যাবেন, তাদের জন্য আলাদা গানম্যান থাকবে।

সতর্কতা 
আর রাসমেলাস্থলে প্রচুর মানুষ থাকায় নিজেরা একটু সাবধানে দল বেঁধে চলাচল করলে ভালো হয়। সুন্দরবনের নদীতে না নামাই ভালো কারণ পানিতে প্রচুর কুমির আছে। বনে ঘোরার সময় উজ্জ্বল কালারের পোশাক না পড়া ভালো। 

রাসমেলায় প্রচুর মানুষের আগমন হয়। তাই দুবলার চরে গ্রাম্য মেলা বসে এই মেলায় পাওয়া যায় মাটি তৈরীকৃত জিনিসপত্র, প্লাস্টিকের খেলনাপাতি, চরের ঠিক পাশেই শুঁটকির পল্লী। প্রত্যেকটার বাড়ির পাশেই শুঁটকি শুকায়। চারদিকে বিভিন্ন মাছের শুটকির গন্ধ শুকতে শুকতে পল্লীর ভেতর দিয়ে শুটকি কিনতে পারেন, দাম বেশি না। চরের পাশ ঘেঁষে হাঁটা শুরু করে মেলার পথে যেতে লাগলাম। তখন সূর্যমামা পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে। সে এক অপরূপ দৃশ্য, যা ছবিতে তোলা সম্ভব না। সে দৃশ্য আপনাকে চোখেই ধারণ করতে হবে। 

মেলাকে  ঘিরে অনেক মানুষের সমাগম হয়। রাতে মেলা দেখা শেষ করে বোটে থাকা, পরের দিন সকালে রাসমেলার মূল উৎসব প্রথম জোয়ারের পানিতে  স্নান  দেখা এক অন্য অনুভূতি। আর এভাবে রাসমেলা দেখা শেষ করে আপনি ইটপাথরের শহরে ফিরতে পারেন।