ভ্রমণের প্যাকিংয়ে হয়ে উঠুন ‘প্রো’

ক্যাটেরিনা ম্যাকগ্রেইল ছিলেন পেশায় একজন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। আবার ঘোরাঘুরির নেশাও ছিল বিস্তর। ফলে প্রায়ই তাকে হুট করে ব্যাগ প্যাক করে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটতে হতো। শুরুতে ব্যাগ গোছাতে বেগ পেতে হতো বেশ।
কিন্তু অল্প দিনেই ব্যাকপ্যাক থেকে শুরু করে বড় সুটকেস, ভ্রমণ অনুযায়ী সব ধরনের ব্যাগ গোছানোতেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সিদ্ধহস্ত। নিজের ব্যাগ গোছানোর অভিজ্ঞতা লিখেছেন আউটডোরস ডটকমে। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য রইল সেইসব ট্রিকস অ্যান্ড টিপস :
রোল করুন, ভাঁজ নয়

সুটকেস বা ব্যাকপ্যাকে কাপড় নেওয়ার সময় ভাঁজ করে নয় বরং গুটিয়ে বা রোল করে নেওয়ার উচিত। এতে শুধু যে জায়গাই কম লাগবে তা নয়, বরং পোশাক কুঁচকে যাওয়ার আশঙ্কাও কম থাকবে। শুধু যে নিত্য ব্যবহারের টি-শার্ট বা ট্রাউজারই রোল করে নেবেন তা নয়, বরং যদি আপনার লাগেজে ভরতে হয় ফরমাল পোশাক, সেটিও রোল করেই নিন। তাহলে এতে কোনো কোঁকচানো ভাব তৈরিই হবে না।
ক্যারি-অন ব্যাগে রাখুন জরুরি জিনিস

ফ্লাইটে ওঠার সময় আপনার সঙ্গে বা হাতে যে ছোট ক্যারি ব্যাগটি থাকবে, তার মধ্যে রাখুন অতি জরুরি জিনিসগুলো। যেমন : প্রয়োজনীয় ওষুধ, এক সেট পোশাক, ছোট টুথপেস্টের টিউব, ছোট ময়েশ্চারাইজারের কৌটা, কন্ট্যাক্ট লেন্স পরলে তার সলিউশন, জরুরি কাগজপত্র এবং অবশ্যই একটি বাড়তি মোবাইল ফোনের চার্জার। অনেক সময়ই দেখা যায় বড় লাগেজ এয়ারপোর্টে খুঁজে পাওয়া যায় না বা হারিয়ে যায়। তেমন বিপদে কাজে লাগবে আপনার এই ছোট ক্যারি ব্যাগটিই।
ক্যাটেরিনের পরামর্শ হলো, বড় লাগেজ হারিয়ে যাবে এটা মাথায় রেখেই ক্যারি ব্যাগ বা কেবিন ব্যাগটি গোছাতে হবে, যেন নতুন কোনও গন্তব্য যেমন নির্জন কোনও দ্বীপে বেড়াতে গেলেও বিপদে পড়তে না হয়।
কমপ্রেশন প্যাকিং কিউব ব্যবহার

ব্যাগ গোছানো সহজ করতে বাজারে পাওয়া যায় কমপ্রেশন প্যাকিং কিউব। যে কোনও অনলাইন মার্কেট প্লেসে আপনি এটি পেয়ে যাবেন। এই প্যাকিং কিউবগুলো ব্যবহারে সুবিধা হলো সুটকেট বা ব্যাগ বেশ অরগানাইজ বা গোছানো থাকে। কিউবগুলো মূলত চেইন দেওয়া বিভিন্ন সাইজের ফাইল বা ব্যাগের মতো। যেগুলোয় আকার অনুযায়ী কাপড় বা অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চেইন বন্ধ করে দিতে হয়। আলাদা আলাদা ব্যাগে সব কিছু নেওয়া যায় বলে মূল সুটকেসে জায়গাও সাশ্রয় হয়।
হাতব্যাগ হোক সবচেয়ে জরুরি

ভ্রমণে বড়সড় হাতব্যাগ নেওয়ার পরামর্শ দিলেন সাবেক এই কেবিন ক্রু। বললেন, ক্যারি অন ব্যাগটি তো সঙ্গে থাকবেই, তারপরও বড় একটি হাতব্যাগ বহন করুন। যেখানে থাকবে ফ্লাইটে অবস্থানকালীন প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী। যেখানে থাকতে পারে ল্যাপটপ, আই মাস্ক, হেডফোন, ফোনের চার্জার, চশমা, সানগ্লাস এবং হালকা স্ন্যাকসজাতীয় খাবার।
হুট করে লাগতে পারে এমন জিনিসগুলো হাতব্যাগে রাখলে সুবিধা হলো, ফ্লাইট চলাকালে কেবিন ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করতে হবে না। মাথার ওপর থেকে কেবিন ব্যাগ নামিয়ে জিনিসপত্র বের করার চেয়ে হাতব্যাগে কিছু বেশি জিনিস বহন করা ভালো– এমনটাই পরামর্শ ক্যাটেরিনের।
বৈচিত্রপূর্ণ পোশাক গোছান
আপনার ভ্রমণ গন্তব্যের ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের পোশাক নেবেন সে বিষয়টি। যেমন যদি আপনি দেশের বাইরে কোথাও অ্যাডভেঞ্চার করতে যান তাহলে বেশ বুদ্ধি করে পোশাক বাছাই করতে হবে। এক্ষেত্রে পোশাকে বৈচিত্র বেছে নিন। যেমন কিছু এক রঙের টি-শার্ট নিতে পারেন, সঙ্গে কয়েকটি চেক শার্ট। যেগুলো ডেনিম প্যান্টের সঙ্গে একেকভাবে মিলিয়ে পরা যাবে।
পোশাকে লেয়ারিং করুন
যদি শীতের অঞ্চলে যান, তাহলে লাগেজে মোটা সোয়েটারের বদলে এমন পোশাক নিন যেগুলো কয়েক লেয়ার করে পরা যাবে। এতে শীতও মানবে আবার লাগেজও বোঝাই হবে না। আবার ভারী কোট বা জ্যাকেটটি ব্যাগে না ঢুকিয়ে শরীরে জড়িয়েই ফ্লাইটে উঠুন। কারণ ফ্লাইটে এমনিতেই অনেক ঠান্ডা থাকে।
আবার লেয়ারিং করে পোশাক পরলে যেটি সুবিধা হবে সেটি হলো, কম ঠান্ডার স্থানে গেলে ওপরের লেয়ারের পোশাকটি খুলে ফেললেই চলবে।
তরলের জন্য প্লাক্টিকের স্বচ্ছ ব্যাগ

বিমানবন্দরের সিকিউরিটি চেক থেকে সহজে ছাড়া পেতে টয়লেট্রিজ ও তরলজাতীয় সামগ্রীগুলো স্বচ্ছ প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে নিন। ভ্রমণের জন্য এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের যে নির্দেশনা থাকে সেই পরিমানেই তরল বহন করুন। আপনার ক্যারি ব্যাগে যেন ১০০ মিলিলিটারের কম পরিমাণ তরল থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
আর যদি বেশি পরিমাণে তরল সামগ্রী যেমন শ্যাম্পু বা লোশন নিতেই হয়, তাহলে মুখ ভালো মতো সিল করে সেগুলো বড় বা চেক-ইন লাগেজে দিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, এক্ষেত্রে টয়লেট্রিজের ব্যাগটা এমনভাবে লাগেজে রাখুন যেন সেটি ফেটে গিয়ে আপনার কাপড়চোপড়ের বারোটা না বাজে।
ভারী জুতা নেবেন যেভাবে

যদি বেড়াতে গিয়ে পাহাড়ে চড়ার শখ থাকে তাহলে তো বেশ শক্তপোক্ত এক জোড়া জুতো নিতে হবে, তাই না? এই ধরনের জুতোজোড়া লাগেজে আঁটানো বেশ কঠিন। তাই প্রথমে জুতার ভেতরে যে খালি জায়গা থাকে, সেখানে ভরে নিন অন্তর্বাস বা মোজার মতো ছোট সামগ্রীগুলো। এরপর জুতোটা ভরুন আলাদা ব্যাগে। তার পর ব্যাগটিতে লাগেজ বা সুটকেসে বসিয়ে নিন। এতে জুতোর ময়লা কাপড়ে লাগার ভয় থাকবে না আবার জুতো পরার মোজা খুঁজেও হয়রান হতে হবে না।
পানির বোতল নিতে ভুলবেন না

উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় পানি পান করা খুব জরুরি। পানি পানের মাধ্যমে আপনি যেমন হাইড্রেটেড থাকবেন তেমনি ভ্রমণটাও আনন্দদায়ক হবে। যখন আপনি বাইরে ঘুরে বেড়াবেন তখন এই পানিই আপনাকে সতেজ রাখবে। সেজন্য সঙ্গে একটি পানির বোতল রাখুন, যেন বারবার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টকে ডেকে পানির কথা বলতে না হয়। তবে এক্ষেত্রে যখন আপনি ফ্লাইটে উঠবেন তখন বোতলটি খালি রাখতে হবে। নাহলে সিকিউরিটি চেকে সেটি আটকে যাবে। তাই সিকিউরিটি চেক পার হওয়ার পর বিমানবন্দরের খাবার পানির কল থেকে বোতলটি ভরে নিন। এতে বোতলজাত পানি কেনার খরচ যেমন কমবে তেমনি প্লাস্টিক বর্জ্যও কম জমবে।
এসব পরামর্শ মেনে চললে, যেকোনো দিন ভ্রমণে বেরিয়ে যেতে সমস্যা হবে না আপনার। গোছগাছ করাকে খুব বড় কোনও চ্যালেঞ্জও মনে হবে না।
অনুবাদ : শেখ সিরাজুম রশীদ।