অর্থাভাবে মুখ লুকিয়ে চলতেন তাপস পাল!
বাংলা চলচ্চিত্রে সুপারহিট ছবিগুলোর একটি ‘দাদার কীর্তি।’ ১৯৮০ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা দিয়েই আলোচনায় আসেন জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল। তবে এর পরও সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে।
তাপসের বন্ধুরা জানান, 'দাদার কীর্তি' তাপস পালকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে কোনো অর্থ পাননি তাপস। আর সেই কারণেই পরের ছবির শুটিংয়ের সময় চন্দননগরের বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন। ভোরে চন্দননগর স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন ধরে কলকাতায় চলে যেতেন। আর রাতের শেষ ট্রেনে চন্দননগরে ফিরতেন। হাতে থাকত একটা খবরের কাগজ। কারণ লোকের মুখে মুখে ফিরত 'দাদার কীর্তি'র নায়ক তাপস পালের কথা। এদিকে অর্থাভাবের কারণে তিনি লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতেন। তাই কেউ যাতে চিনতে না পারেন, সেইজন্য কাগজ দিয়ে মুখ ঢেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতেন তিনি।
তাপস পালের মৃত্যুর খবর পৌঁছাতেই শোকে ভেঙে পড়েছে তাঁর নিজের শহর চন্দননগর। তাপসের বাল্যবন্ধুদের কথায় উঠে এলো, নায়ক তাপস পালের প্রথম অভিনয় জীবনের সংগ্রামের কথা। তাঁর অর্থাভাবের কথা।
আজ ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল। আজই কলকাতায় নেওয়া হবে তাপসের মরদেহ। আগামীকাল বুধবার দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলার মহাশ্মশানে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পালের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
ঘরের ছেলের চলে যাওয়ার খবর পেতেই মঙ্গলবার সকালে চন্দননগরের সর্ষেপাড়ার বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন অসংখ্য অনুরাগী। বাড়ির বন্ধ দরজার পাশে তাপস পালের আত্মার শান্তি কামনায় পোস্টার লাগিয়েছেন তাঁরা। মোমবাতিও জ্বালান। অভিনেতা তাপস পালের ছোটবেলার বন্ধু থেকে পরিচিতরা সবাইই চাইছেন, একবার চন্দননগরের ভিটেবাড়িতে তাঁর দেহ আনা হোক। এই চন্দননগরের বাড়ি থেকেই তাপস পালের নায়ক হয়ে ওঠা। তাই শেষ বিদায়ের আগে একবার সেখানে নিয়ে আসা হোক অভিনেতাকে। অভিনেতার বন্ধুরা জানালেন, চন্দননগরের মানুষ এখন চায়, তাপস পালের মূর্তি প্রতিষ্ঠা হোক। চন্দননগরের এই ভিটেবাড়ি পিতা গজেন্দ্র চন্দ্র পাল ও তাপস পালের নামাঙ্কিত সেবা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক।
তাপস পালের মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তাঁর বাল্যবন্ধু বাবু পাল। তিনি জানালেন, শেষ দিন পর্যন্ত বন্ধু তাপসের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। মুম্বাই থেকে শেষ ফোনে তাপস পাল জানিয়েছিলেন, মাস দেড়েক পরই ফিরবেন। ফিরে এসে আবার শুটিং শুরু করবেন। কিন্তু আজ সকালে সবই উলটপালট হয়ে গেল। মুম্বাই থেকে ফোনেই বন্ধু তাপস পালের প্রয়াণের খবর পান তিনি।
হুগলির চন্দননগরের সর্ষেপাড়ার চিকিৎসক গজেন্দ্র চন্দ্র পালের একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন তাপস পাল। তিন বোন ও এক ভাইয়ের সঙ্গে সর্ষেপাড়ার বাড়িতেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। প্রথমে পাড়ার কাছেই কানাইলাল বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা। তারপর চুঁচুড়া মহসিন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন। এরপর হঠাৎ করেই ফিল্মে সুযোগ পান তাপস পাল। 'দাদার কীর্তি'-তে দুর্দান্ত সাফল্যের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।