অ্যামাজনের ‘স্বর্ণযুগ’, করোনায় মুনাফা বেড়েছে তিনগুণ
নভেল করোনাভাইরাসজনিত মহামারিতে লকডাউন, বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেক মানুষই দোকানপাট কিংবা শপিংমলে না গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমেই পণ্য কেনাকাটা করে আসছে। আর গত বছরের শুরু থেকেই ঘরে বসে পণ্য কেনার অভ্যাস করে ফেলেছে গ্রাহকেরা। এদিকে, মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যামাজন যে শুধু অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করে আসছে তা নয়, তারা করোনা পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুবিধাই দিয়ে আসছে। আর এসব সুবিধা লুফে নিচ্ছে গ্রাহকেরা।
এই মহামারিতে ভিডিও স্ট্রিমিং থেকে শুরু করে পণ্য সরবরাহ—সব ধরনের সুবিধাতেই গ্রাহকদের আগ্রহ অ্যামাজনের জন্য সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসেই তারা বিপুল পণ্য বিক্রি করেছে। এ ছাড়া লাভ হয়েছে তিনগুণ। অ্যামাজনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী কয়েক মাসও তাদের পণ্য বিক্রির এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারি অ্যামাজনের জন্য ‘স্বর্ণযুগ’ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
এদিকে, বর্তমানে অটোমেটেড গ্রোসারি স্টোর, অনলাইন স্বাস্থ্যসেবার প্রচার করে যাচ্ছে অ্যামাজন। তবে তাদের মূল পরিষেবা—হোম ডেলিভারি, মিডিয়া স্ট্রিমিং, ক্লাউডভিত্তিক ওয়েব পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে এক বছরে তাদের লাভের অঙ্ক বিপুল বেড়েছে।
গত বছর ৭৫ বিলিয়ন ডলার থেকে মার্চের শেষে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ বিলিয়ন ডলারে। এ ছাড়া বছরের মধ্যেই লাভ ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে।
এদিকে স্ট্রিমিং সার্ভিস প্রাইম ভিডিও এবং অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস (এডব্লিউএস), দ্য ওয়েব সার্ভিস ডিভিশনকে তুলে ধরে অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফ বেজোস জানিয়েছেন, অ্যামাজন পরিবারে এই পরিষেবাগুলোকে পেয়ে তিনি গর্বিত।
বেজোস আরও বলেন, ‘প্রাইম ভিডিওতে প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন প্রাইম সদস্য গত বছর বিভিন্ন শো ও সিনেমা দেখেছে।’
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যামাজনের সিইও পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা বলেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। এ বছরের শেষদিকে সিইও পদ ছেড়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন তিনি।
বেজোস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘উদ্ভাবনের কারণেই অ্যামাজন আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে... আমাদের আর্থিক ফলাফলের দিকে যদি তাকান, তাহলে যা দেখছেন, তা আসলে দীর্ঘ সময়ের উদ্ভাবনমূলক কাজের সামগ্রিক ফলাফল।’
নতুন দায়িত্ব নিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে মনোযোগ দেবেন, তা-ও জানিয়েছেন জেফ বেজোস। অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে কর্মীদের উদ্দেশে বেজোস বলেছেন, নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অ্যামাজনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকবেন। তবে এর পাশাপাশি বেজোস ডে ওয়ান ফান্ড, বেজোস আর্থ ফান্ড, ব্লু অরিজিন, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন দিকে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ ছাড়া জেফ বেজোস স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়লেও এখনই অবসরের চিন্তা তাঁর মাথায় নেই।
বেজোস বলেন, ‘এই মুহূর্তে অ্যামাজন তার সেরা উদ্ভাবনী অবস্থানে আছে। আর এ কারণে এখনই (পদ পরিবর্তনের) পালাবদলের সেরা সময়।’
‘আমি এতটা শক্তি এর আগে অনুভব করিনি, এবং এটা (সিইও পদ ছাড়া) অবসর গ্রহণ করা নয়,’ যোগ করেন বেজোস।
১৯৯৪ সালে নিজের গ্যারাজে আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা অ্যামাজনের টিভি ও মিউজিক স্ট্রিমিং, দৈনন্দিন জিনিসপত্র, ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বিভিন্ন ব্যবসা বেড়েছে।
অন্যদিকে, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট বলছে, এমন করোনাকালে তাদের বিভিন্ন পরিষেবা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিয়েছে মানুষজন। যার প্রভাব পড়েছে অ্যালফাবেটের আয়ে। অ্যালফাবেট জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের আয় বেশ বেড়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যালফাবেটের নিট মুনাফা ১৬২ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ সময় বিজ্ঞাপন থেকে আয় বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশ।
অ্যালফাবেট ও গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুন্দর পিচাই বলেন, ‘গত বছর থেকে মানুষ তথ্য জানতে, সংযুক্ত থাকতে এবং বিনোদনের জন্য গুগলে অনুসন্ধান করেছেন এবং অনেক অনলাইন পরিষেবা গ্রহণ করেছেন।’
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে গুগলের অনুসন্ধান ব্যবসা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থের হিসাবে যা ৩১ দশমিক ৯ বিলিয়ন। আর ইউটিউবে থেকে আয় বেড়েছে ৪৯ শতাংশ বা ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।