আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হলি আর্টিজান হামলার রায়

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলায় সাত আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ খবর গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আলজাজিরাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলা রায়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবরের শিরোনাম করেছে ‘২০১৬ সালের ক্যাফে হামলায় সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘২০১৬ সালের ক্যাফে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি ইসলামবাদীদের মৃত্যুদণ্ড’।

বার্তা সংস্থা এপি এ খবরের শিরোনাম দিয়েছে ‌‘ক্যাফে হামলার ঘটনায় ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ’।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার শিরোনাম ‘হলি আর্টিজান : সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দিল ঢাকা আদালত’।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, মো. আবদুস সবুর খান, মো. আসলাম হোসেন র‍্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান সাগর, মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। খালাস পাওয়া আসামি হলো মো. মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

সাজা আরোপ প্রসঙ্গে আদালত যা বলেছেন

বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জেএমবির একাংশ নিয়ে গঠিত নব্য জেএমবির সদস্যরা গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় ও দানবীয় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদের উন্মত্ততা, নিষ্ঠুরতা ও নৃশংসতার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিরপরাধ দেশি-বিদেশি মানুষ যখন রাতের খাবার খেতে হলি আর্টিজান বেকারিতে যায়, তখনই আকস্মিকভাবে তাঁদের ওপর নেমে আসে জঙ্গিবাদের ভয়ালরূপ। জঙ্গি সন্ত্রাসীরা শিশুদের সামনে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জঙ্গিরা  নিথর দেহগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় হলি আর্টিজান বেকারি। কলঙ্কজনক এ হামলার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চরিত্র হরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এর ফলে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য পরিচিত বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুণ্ণ হয়। সে জন্য সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে আসামিরা কোনো ধরনের অনুকম্পা বা সহানুভূতি পেতে পারে না। এই ক্ষেত্রে আসামিদের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ৬(২)(অ) ধারার প্রদত্ত সর্বোচ্চ সাজাই প্রদানই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং ভাগ্যহত মানুষের স্বজনেরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।

হলি আর্টিজান অভিযানে নিহত ৫ জঙ্গি

হলি আর্টিজানে হামলা পরবর্তী অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছিল। তারা হলো রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।

বিভিন্ন অভিযানে নিহত ৮

হলি আর্টিজানর মামলার অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলো তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

গুলশান হামলা নিহত হয়েছিলেন যাঁরা

হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা গুলি করে ও গলা কেটে বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যা করেন। তাঁরা হলেন ইতালীয় নাগরিক ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস ক্লাওদিয়া মারিয়া ডি এন্তোনা (৫৬), মিসেস সিমোনা মন্টি (৩৪), স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসেস নাদিয়া বেনেডেট্টি (৫১) ও সুপারভাইজার মার্কো টোনডাট (৪১), একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মাননিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক মিসেস আদেলে পুগলিসি (৫৫), ক্রিশ্চিয়ান রসি (৪৭), একটি টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক ক্লাদিও ক্যাপেলি (৪৫), মিসেস ভিনসেনজো ডি অ্যালেস্ট্রো (৪৫) ও মিসেস মারিয়া রিবোলি (৩৩)।

নিহত জাপানি নাগরিকরা হলেন মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত হিরোশি তানাকা (৮০), কোয়ো ওগাসাওয়ারা (৫৭), ইয়োকি সাকাই (৪২), নোবুহিরো কোরুসাকি (৪৯), মাকোটো ওকামুরা (৩২), রুই সিমোডাইরা (২৯) ও হিডেকি হাশিমোটো (৬৫)।

ভারতীয় নাগরিক ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ছাত্রী তারিশি জৈন (১৮)।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক রাজধানীর গুলশান ২-এর ৫০ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. এহসানুল কবিরের মেয়ে অবিন্তা কবির (২০) এবং ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন (২০) নিহত হন।

অন্যদিকে ঘটনার শুরুতে জঙ্গিদের বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও ঢাকা মহানগর (উত্তরের) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিম।

অভিযানের সময় নিহত হন হলি আর্টিজান বেকারির দুই স্টাফ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কুলকাঠি গ্রামের হাসেম চৌকিদারের ছেলে সাইফুল চৌকিদার (৪০) ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একরামপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার সরকারের ছেলে জাকির হোসেন শাওন (২২)।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হন পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ দাবি করে, নব্য জেএমবির সদস্যরা এই হামলা চালিয়েছে।