‘আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি, ব্রো’

নানা কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখন মধ্যপ্রাচ্য। আর মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে প্রচণ্ড সংঘাতে উত্তপ্ত সিরিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিন। এর মধ্যে ইরানের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি, সমর প্রকৌশলবিদ ও সেনা কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ও ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনী শীর্ষ নেতা আবু মাহদি আল মুহানদিসকে হত্যা করে সেই উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের স্থপতি হিসেবে পরিচিত এই জেনারেলকে বাগদাদ বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়। এরপরই পাল্টে গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দৃশ্যপট। দেখা দিয়েছে আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা।
জেনারেল সোলেইমানিকে হত্যা করার কারণে বাজতে শুরু করেছে আরেকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দামামা। সেই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি পেরিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের দেড় দশক পর ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও দেশটি ফের আঞ্চলিক সংঘাতের কেন্দ্রে চলে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সোলেমানির হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র মুহূর্তেই পাল্টে গেল। এ হত্যাকাণ্ড ট্রাম্পকে স্বস্তি দিলেও মধ্যপ্রাচ্যে রক্ত ঝরাবে। সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার অভিযোগ তুলেছেন, তেহরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়া বাহিনী ইরাকে মার্কিন সেনাদের ওপর রকেট হামলা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি ইরাকের বাগদাদে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কম্পাউন্ডে হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় তারা কম্পাউন্ডের কাছে প্রহরা চৌকিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলায় উস্কানি দেওয়ার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন। এর জন্য ইরানকে চরম মূল্য দিতে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তার এ ঘোষণার পরই মার্কিন হামলায় নিহত হন সোলেইমানি।
মধ্যপ্রাচ্যে চরম উত্তেজনার মধ্যেই পশ্চিমা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কুয়েতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্যারাট্রুপার পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। যেই কথা সেই কাজ। সেনা পাঠানোর তোরজোড় এরইমধ্যে শুরু করে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
মঙ্গলবার রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনকে কুয়েতে দ্রুত সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে সামরিক একাডেমিতে সেনাদের সঙ্গে কথা বলতে যান রয়টার্সের সাংবাদিক।
সেখানে ৬০০ সেনা সদস্যকে প্রথম ধাপে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। তাঁরা সেখানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন। তরুণ ওই সেনাদের অনেকেরই যুদ্ধের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
তাঁদের মধ্য থেকে এক সেনা সদস্য উৎসাহ নিয়ে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে যাচ্ছি, ব্রো।’ এ সময় সে দুই হাতে থাম্বস আপ চিহ্ন দেখিয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই এটি হয়তো হতে যাচ্ছে জীবনের প্রথম কোনো যুদ্ধ। এ সময় তাঁদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে প্রস্তুত হতে দেখা গেছে। অনেককে আবার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে শেষ মুহূর্তের ফোনালাপ করতেও দেখা গেছে।