ইউরোপে তীব্র তাপপ্রবাহ : ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী দাবানল
পর্তুগাল, স্পেন ও ফ্রান্সে হাজার হাজার অগ্নিনির্বাপণ কর্মী দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। খবর বিবিসির।
পর্তুগালের উত্তরাঞ্চলে স্পেন সীমান্তের কাছে ফোজ কোয়া এলাকায় একটি পানি ছিটানোর উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে এর পাইলটের মৃত্যু হয়েছে।
পর্তুগালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—গত সপ্তাহ থেকে তীব্র গরমে অন্তত ২৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গিরোন্ডে দাবানল তাণ্ডব চালাচ্ছে। ওই এলাকা থেকে ১২ হাজারের বেশি মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মানব-প্রভাবিত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে ঘন ঘন তাপপ্রবাহ দেখা দিচ্ছে। এসব তাপপ্রবাহ আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। শিল্প যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে পৃথিবী এরই মধ্যে প্রায় এ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতর হয়েছে। এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার কার্বন নির্গমন হার বিপুল মাত্রায় হ্রাস না করলে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে।
ফ্রান্সের আবহাওয়া পরিষেবা দপ্তর আজ রোববার সে দেশের দক্ষিণের কিছু অঞ্চলে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিয়েছে। এবং আগামীকাল সোমবার তাপমাত্রার নতুন রেকর্ডের পূর্বাভাস দিয়েছে।
গতকাল শনিবারের শেষ দিকে ফ্রান্স আরও ২২টি আঞ্চলিক বিভাগকে উচ্চমাত্রার কমলা সতর্কতায় রেখেছে। এসব এলাকার বেশির ভাগই আটলান্টিক উপকূলবর্তী।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন, দাবানলে এ পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর ভূমি পুড়ে গেছে। মন্ত্রী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ‘উল্লেখ করার মতো সাহসিকতার’ প্রশংসা করেন।
এদিকে, আল্পস পর্বতারোহীদের ‘বিশেষ জলবায়ু পরিস্থিতির’ কারণে বড় শিলা পতনের ঝুঁকি থাকায় মন্ট ব্ল্যাঙ্কে ভ্রমণ স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
পর্তুগালে গত মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এবং স্পেনে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে পৌঁছেছে।
পর্তুগিজ আবহাওয়াবিদেরা বলছেন—আগামী সপ্তাহে কমার আগে সেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকবে।
স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে তোরেমোলিনোসের সৈকতে ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকেরা পাহাড়ে ধোঁয়ার বড় বড় ঢেউ উঠতে দেখেন। ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
ভূমধ্যসাগরের অন্যান্য অংশও তাপপ্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতালির সরকার শুষ্ক পো উপত্যকায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সে দেশের দীর্ঘতম নদীটির কিছু স্থানের পানি অনেক শুকিয়ে গেছে।
অন্যদিকে, গ্রিসে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা এথেন্সের প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ক্রিটের উত্তর উপকূলে রেথিমনোর কাছে ফেরিজা এলাকায় দাবানল মোকাবিলা করছেন। রেথিমনোর কাছে সাতটি গ্রাম খালি করা হয়েছে।
মরক্কোর উত্তরাঞ্চলীয় লারাচ, ওয়েজান, তাজা ও তেতুয়ান প্রদেশে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় বেশ কয়েকটি গ্রাম খালি করতে হয়েছে। এ ছাড়া কাসার এল কেবির এলাকায় একটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আগুনে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে।