ইতালিতে করোনায় একদিনেই ঝরল ২৫০ প্রাণ

Looks like you've blocked notifications!

চীনে করোনার সংক্রমণ কমে এলেও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে ইতালি। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি ইতালি। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিন দিন বেড়েই চলছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর মধ্যে একদিনেই মৃত্যু হয়েছে আড়াইশ জনের, যা ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টার হিসাবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর। এর ফলে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ২৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৬৬০ জন মানুষ। অন্যদিকে, ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়ি ফিরে গেছেন এক হাজার ৪৩৯ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছে ইতালির সরকার। সেখানে পুরো দেশকেই রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। এ ছাড়া ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব ধরনের দোকানপাট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মারিও আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইউরোপের মধ্যে ইতালিই সবার আগে এই জরুরি অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে।’

লুইজি দি মারিও আরো বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা যদি টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যেতে পারেন, আমরাও আমাদের বাসা থেকে বের হওয়া বাদ দিতে পারব। অসংখ্য মানুষ এই নিয়মকে সম্মান করছেন। কিন্তু যাঁরা করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শুধু ইতালি নয়, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে স্পেনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৩২ জন। ফ্রান্সে মৃত বেড়ে ৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৬৬১ জন। জার্মানিতে আটজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত তিন হাজার ৬৭৫ জন। সুইজারল্যান্ডে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ১২১ জনে পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৭৯৮ জন। নরওয়েতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৬ জন, নেদারল্যান্ডসে ১০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৪ জনে, ডেনমার্কে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৪ জন এবং বেলজিয়ামে তিনজনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৯ জনে।

ইউরোপের এমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগ আরো বেড়ে গেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, চীনের পর করোনাভাইরাসের নতুন কেন্দ্রস্থল হিসেবে উঠে আসছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা, পুরো বিশ্বে করোনা মহামারি এখনো চরম আকার ধারণ করেনি। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘চীনে করোনা সংক্রমণ চরম আকার নিয়েছিল। বর্তমানে ইউরোপ মহাদেশে প্রতিদিন এর চেয়েও বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।’ এ ছাড়া করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্বের সব দেশকে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

এদিকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার ৪০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৪৪ হাজার ৩৩৬ জন মানুষ। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৭০ হাজার ৮৬৪ জন।

ইরানেও করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৫১৪ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬৪ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ৮৬ জনে পৌঁছেছে।

করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্য এবং ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রিয়া, লিথুয়ানিয়া, জার্মানি, পর্তুগাল ও আলজেরিয়ায় স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডোও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সে কারণে হোম আইসোলেশনে চলে গেছেন এই দম্পতি। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার নিজেই তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য ও রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আর কোথায় মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ৬৯ বছর বয়সী এক নারী ও গত মঙ্গলবার কর্ণাটকে ৭৬ বছরের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

এদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর স্বাস্থ্য ছাড়পত্র নিয়ে আজ শনিবার দেশে ফিরতে যাচ্ছেন ২৩ বাংলাদেশি। বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় আজ বিকেলে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে নয়াদিল্লি ছাড়বেন তাঁরা। ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে তাঁদেরও চীনের উহান শহর থেকে ফেরত এনেছিল ভারত।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে আরোহনের অভিযান সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সব দেশের পর্যটকদের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে নেপাল।

এদিকে, ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে মার্কিন ও চীনা কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী দাবি উড়িয়ে দিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ক্ষেত্রে গবেষকদের মতামতকেই প্রাধান্য দেবে বেইজিং।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং সুয়াং বলেন, ‘করোনার উৎপত্তি নিয়ে সম্প্রতি নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। মার্কিন কর্মকর্তা এবং কংগ্রেস সদস্যরা এ নিয়ে চীনকে দায়ী করছেন। চীনের এক কর্মকর্তাও এ ভাইরাস ছড়ানোর জন্য মার্কিন সেনাদের দায়ী করেছেন। তবে চীন সরকার বিশ্বাস করে, এটি বিজ্ঞানসম্মত বিষয়, তাই এ ক্ষেত্রে গবেষকদের মতামতই গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট পাঁচ কোটি মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়েছে।