ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ : যেসব কারণে মন্ত্রিসভা গঠনে তিনি ব্যর্থ হলেন
ইরাকের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ তৌফিক আলাভি মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অন্য কাউকে এ দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ইরাকে গত ১ অক্টোবর থেকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলে আসছে। বেকারত্ব বৃদ্ধি ও জনগণের জীবনমান কমে যাওয়ার প্রতিবাদে প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হলেও বিদেশি হস্তক্ষেপ, অভ্যন্তরীণ কোনো কোনো মহলের বিশ্বাসঘাতকতা ও কিছু ব্যক্তি বিভ্রান্ত হওয়ার কারণে এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়।
সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজপথে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দুল মাহদি পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য একাধিক ব্যক্তির নাম জমা পড়লেও প্রেসিডেন্ট বারহাম সালেহ শেষ পর্যন্ত গত এক ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ তৌফিক আলাভিকে প্রধানমন্ত্রী করে তাঁকে মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব দেন। কিন্তু এক মাসের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পর আলাভি ইস্তফা দিলেন।
পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ তৌফিক আলাভি কেন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যর্থ হলেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। ইরাকের গত এক সপ্তাহর ঘটনাবলী লক্ষ করলে দেখা যাবে, একদিকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির প্রায় ১০০ বছর পরও দেশটি আজও উপনিবেশের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি।
অন্যদিকে, পাঁচ মাস ধরে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও সহিংসতা চলে আসলেও দেশটির রাজনৈতিক সংগঠনগুলো জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে নিজস্ব চিন্তা বিশ্বাস ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা তাদের সত্যিকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সম্মানকে ম্লান করে দিচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরাকে এখন জনসংখ্যার যে কাঠামো ও দুষিত রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে তা মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নীতিরই ফসল। সেখানে শিয়া, সুন্নি ও কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বহুকাল ধরে বিরোধ বজায় রয়েছে এবং ক্ষমতার জন্য ১০০ বছর ধরে দ্বন্দ্ব সংঘাত চলে আসছে।
এখনো ইরাক এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ও দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পার্লামেন্টের আসন লাভ এবং মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট দখলের জন্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ তৌফিক আলাভির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল।
প্রকৃতপক্ষে, ইরাকের রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতির বিষয়টি আমলে তো নেয়নি এমনকি জাতীয় স্বার্থের বিষয়টিকেও উপেক্ষা করেছে। এ কারণে আলাভি বলেছেন, বিভিন্ন দল ও সংগঠনের রাজনৈতিক চাপের মুখে তিনি মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
আলাভির এ ব্যর্থতার কারণে এ মুহূর্তে প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট উভয় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তাঁকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে হবে। তবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কাজটি অনেক কঠিন হবে। অচলাবস্থা যদি বহাল থাকে থাকে ফের জন বিক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে সরকারকে। এ অবস্থায় ইরাকের পরিস্থিতি আগামীতে কোনদিকে যাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।