এক সন্তান নীতিতে আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বহু চীনা দম্পতি : গবেষণা

Looks like you've blocked notifications!
জন্মহার বাড়াতে চীন সরকার ২০১৬ সালে দুই সন্তান নীতি চালু করে। ছবি : সংগৃহীত

এক সন্তান নীতির কারণে অনেক চীনা দম্পতি মানসিক যাতনায় এবং অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁরা আর্থিকভাবে এবং আবেগ-অনুভূতির ক্ষেত্রে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ছেন। সম্প্রতি চীনা মা-বাবাদের দুঃখ নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়ার (সিএনএ) বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই এ খবর জানিয়েছে।

সিএনএ’র প্রতিবেদনে গবেষক লিহং শি উল্লেখ করেন, একমাত্র সন্তানের মৃত্যু সব মা-বাবার ব্যাপক হতাশার কারণ। একইসঙ্গে একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে চরম হতাশায় আর্থিক ক্ষতিও হতে পারে।

১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীন সরকার চীনা দম্পতিদের জন্য এক সন্তানের নীতি বেঁধে দেয়। দেশটিতে একমাত্র সন্তান হারানো ১০০ মা-বাবার ওপর ওই গবেষণা চালানো হয়। এসব মা-বাবা অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা বা খুনের কারণে তাঁদের সন্তান হারিয়েছিলেন। একমাত্র সন্তান যখন মারা যায়, তখন সেসব মা-বাবার পুনরায় সন্তান জন্মদানের বয়স পার হয়ে যায়। তাঁরা আরেকটি সন্তান জন্মদানে সমর্থ ছিলেন না।

সন্তান হারানো ওইসব মা-বাবার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন লিহং শি। তিনি বলেন, ‘বয়স্কদের সুরক্ষার প্রধান মাধ্যম তাঁদের সন্তান—এমন  একটি দেশে এসব বাবা-মা নিজেদের ব্যর্থ মনে করেন, কারণ তাঁদের সরকার জন্ম-পরিকল্পনা নীতি থেকে আরও দূরে সরে গেছে। এর ফলে তাঁরা বৃদ্ধ বয়সে শোকাহত, একা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন।’

২০১৭ সালে ৬০ বছর বয়সী এক মা বলেন, ‘আমরা আরও বেশি সন্তান নিতে চেয়েছিলাম। আমাদের যে কেবল একটি সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল—সেটি আমার মা-বাবার পক্ষে মেনে নেওয়া আরও কঠিন ছিল।’

সিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়, অজনপ্রিয় ‘এক সন্তান নীতি’ বাস্তবায়নে গর্ভনিরোধ এবং তাতেও কাজ না হলে গর্ভপাতসহ কঠোর সব পদক্ষেপ নিয়েছিল চীন সরকার। যদি কেউ এই নিয়ম ভাঙত, তাহলে তাকে আর্থিক জরিমানা করা হতো। এ ছাড়া সরকারি নীতির বাইরে গিয়ে বেশি সন্তান নিলে প্রায়ই সে নাগরিকদের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো না। যেসব মা-বাবা চীন সরকারের জন্য কাজ করছিলেন, শহরের অনেকেই চীনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে কাজ করতেন, তাঁদের একাধিক সন্তান থাকলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি ছিল।

এক সন্তান নীতি দম্পতিদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে, যার ফলে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানহারা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সন্তানহারা এক মা বলেন, ‘একটি সন্তান নিয়ে পরিবারগুলো যেন টাঙানো দড়ির ওপর হাঁটছে। যেকোনো মুহূর্তে প্রত্যেক পরিবার দড়ির ওপর থেকে পড়ে যেতে পারে। আমরাও দুর্ভাগাদের একজন।’

সাক্ষাৎকার দেওয়া অন্যরা বিভিন্ন অঞ্চলে নার্সিং হোমের অতিরিক্ত ব্যয় এবং কম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চিন্তিত। চীনের বৃদ্ধাশ্রম বা বয়স্কদের পরিচর্যায় নিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বৃদ্ধ জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারে না এবং এসব সুযোগসুবিধা বিমার আওতায় নয়। সিএনএ জানিয়েছে, চীনের এক সন্তান নীতি এখন ইতিহাস, কিন্তু এর জের কতটা হবে, তা নির্ভর করবে সরকার শোকাহত মা-বাবাদের কীভাবে মূল্যায়ন করছে।

দরিদ্রতা এবং অধিক জনসংখ্যা কমাতে ৪০ বছর ধরে এক সন্তান নীতির কারণে চীনে জন্মহার খুব দ্রুত কমে যায়। ২০১৬ সালে জন্মহার বাড়াতে চীন সরকার দুই সন্তান নীতি চালু করে। ২০২১ সালের মে মাসে চীন সরকার জানায়, চীনা পরিবারগুলো তিনটি সন্তান নিতে পারবে।