‘এখন শুধুই যন্ত্রণা, তবু বাঁচতে হবে আরো অনেকটা’

Looks like you've blocked notifications!
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলছেন জ্যাকব ব্লেক। ছবি : সংগৃহীত

পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হওয়ার ফলে অসাড় হয়ে যেতে পারে তাঁর কোমর থেকে পা। চব্বিশ ঘণ্টাজুড়ে তাঁর শরীরে শুধুই যন্ত্রণা। তবু তিনি বলছেন, বাঁচতে হবে, জীবনটা বদলাতে হবে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে এ কথাগুলোই বললেন জ্যাকব ব্লেক। তাঁর এই বার্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই তা ভাইরাল হয়ে গেছে।

জ্যাকব ব্লেক। সপ্তাহ দুয়েক আগে মার্কিন পুলিশি বর্বরতার শিকার হওয়া ২৯ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। হাসপাতাল থেকে তাঁর যন্ত্রণার কথা জানিয়ে ব্লেক বললেন, ‘আমার জীবন তো শুধুই আমারই জীবন নয়। আমার পা দুটো, যা দিয়ে আমি জীবনে এগিয়ে যেতে পারতাম, হয়তো বাদ দেওয়া হবে। তবু এখনো অনেকটা বাঁচতে হবে।’ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

জেকব ব্লেকের এই মনের জোর দেখে অবাক হয়ে তাঁর কথাগুলো ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন তাঁরই আইনজীবী। হয়তো দুনিয়াকে দেখাতে চেয়েছেন, ঠিক কতটা যন্ত্রণা পাচ্ছেন জ্যাকব ব্লেক। বার্তা দিতে চেয়েছেন, এ লড়াই তাঁরা হারবেন না।

জ্যাকব ব্লেক বলেছেন, ‘আমি বলছি শোনো, আমাদের জীবনটা বদলাতে হবে। আমাদের আরো একজোট হতে হবে, আমাদের টাকা জমাতে হবে, আমাদের জীবন আরো সহজ করতে হবে। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেছে।’

জ্যাকব জানিয়েছেন, এখন তাঁর শুধুই যন্ত্রণা হচ্ছে। এমনকি শ্বাস নিতে কষ্ট, ঘুমাতে গেলে কষ্ট, খেতে গেলেও কষ্ট।

জ্যাকবের এই ভিডিও মনে করিয়ে দিয়েছে আরো কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিসে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের ওপর পুলিশি নিষ্ঠুরতার স্মৃতি। পুলিশের বুটের চাপে ছটফট করতে করতে জর্জও বলেছিলেন, ‘নিশ্বাস নিতে পারছি না, দম বন্ধ হয়ে আসছে!’

যন্ত্রণায় নিশ্বাস নিতে পারছেন না জ্যাকবও। পার্থক্য একটাই, প্রাণে বেঁচে গেছেন জ্যাকব। সাতটি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েও এখনো লড়াই করে যাচ্ছেন।

জ্যাকবের ঘটনাটি গত ২৩ আগস্টের। উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের কেনোশা শহরের জ্যাকব ব্লেককে পেছন থেকে পরপর সাতটি গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে। ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পরনে হাতকাটা সাদা গেঞ্জি ও কালো হাফপ্যান্ট পরা এক যুবক নিজের গাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। পেছন থেকে ছুটে আসছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দুজনের হাতেই বন্দুক। একজন কর্মকর্তা যুবকের গেঞ্জি টেনে ধরে কিছু বলছেন। তাতে যুবক বিশেষ পাত্তা না দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠতে যাচ্ছেন। এরপরই কান ফাটানো গুলির আওয়াজ। পরপর সাতটি।

ওই ঘটনাকে ঘিরে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান তুলে রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। নিরস্ত্র যুবককে কেন পেছন থেকে গুলি করল পুলিশ, এ প্রশ্নে উত্তাল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন।

এরপর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করা হয়।

জ্যাকবকে কেন পেছন থেকে গুলি করা হলো, সে প্রশ্নের সঠিক জবাব মেলেনি। জ্যাকবের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, সন্তানদের নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন জ্যাকব। সে সময় তাঁরই এক প্রতিবেশীর সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে পুলিশ। তারপরই জ্যাকবকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ। জ্যাকবের তিন সন্তানের সামনেই তাঁকে গুলি করা হয়। বাবাকে রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখে ট্রমার মধ্যে রয়েছে জ্যাকবের বাচ্চারা।