এ বছরেই মডার্নার করোনা টিকা সরবরাহে আশাবাদ

Looks like you've blocked notifications!
মডার্না গ্রুপের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বিতরণের জন্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে সুইস ফার্ম লোনজা। ছবি : সংগৃহীত

কে আগে করোনার ভ্যাকসিন আনবে—মডার্না, ফাইজার নাকি জনসন অ্যান্ড জনসন— তা নিয়ে জোর প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে এই তিনটি প্রথম সারির ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালে সাফল্য মেলার দাবি করেছে মডার্না ও ফাইজার ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।

মডার্না গ্রুপের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও বিতরণের জন্য সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে সুইস ফার্ম লোনজা। তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, চলতি ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসতে পারে মডার্না। ভ্যাকসিনের বিপুল উৎপাদনের প্রস্তুতিও চলছে। বছরে প্রায় ৩০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।

লোনজা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা টোরস্টেন স্কিমিডিট বলেছেন, ২১ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির প্রস্তুতি হয়ে গেছে। সরকারি অনুমোদন মিললেই বিপুল হারে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। ল্যাবরেটরিতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভ্যাকসিনের ভায়াল সংরক্ষিত করে রাখা হবে।

তৃতীয় স্তরের সবচেয়ে বড় ট্রায়াল করছে মডার্না বায়োটেকনোলজি। যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজারের বেশি জনকে ভ্যাকসিনের ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে। মডার্না জানিয়েছে, তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট ক্রমেই ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় খবর হলো, ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের শরীরেও ভ্যাতসিনের ডোজে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, কমবয়সীদের চেয়েও কয়েকজন প্রবীণ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সংখ্যা অনেক বেশি। যার অর্থ হলো, শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে বয়স্কদের মধ্যেও। ভ্যাকসিন ট্রায়ালের যেটা অন্যতম বড় ইতিবাচক দিক।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (এনআইএইচের) পরিচালক এবং হোয়াইট হাউসের প্রদান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এপিডেমোলজিস্ট অ্যান্থনি ফসির তত্ত্বাবধানে এমআরএনএ ভ্যাকসিন বানিয়েছে মডার্না। এ গবেষণায় রয়েছেন এনআইএইচের অধীন ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানীরা। সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় ভ্যাকসিন ও ওষুধ নির্মাতা সংস্থা লোনজ়া গ্রুপ এজির সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তিও হয়েছে মডার্নার। মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ব্যানসেল জানিয়েছেন, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে অনেক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এইচআইভি বা এইডস রোগীদের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এই ট্রায়াল সফল হলে পরবর্তী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে।

মডার্নার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রথম পর্বের প্রতিবেদন চলে এসেছে আগেই। সে প্রতিবেদনে গবেষকরা দাবি করেছিলেন, ভ্যাকসিনের ডোজে অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের ট্রায়ালের প্রতিবেদনই সামনে এনেছিল মডার্না। পরে জানা যায়, ৫৫ বছরের বেশী বয়সীদেরও ভ্যাকসিন প্রয়োগে সম্ভাব্য ফল খতিয়ে দেখছেন ভাইরোলজিস্টরা। বিশজন প্রবীণকে বেছে নেওয়া হয়েছিল যাদের কোনো ক্রনিক রোগ নেই। সে ট্রায়ালের প্রতিবেদন সামনে এনে ‘মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানিয়েছে, বয়স্কদের শরীরেও ভ্যাকসিনের ডোজ ভালো প্রভাব ফেলেছে।

সাধারণত দেখা যায়, ৫০ বছরের বেশী বয়সীদের শরীরে ভ্যাকসিনের ডোজে তেমনভাবে ইমিউনিটি তৈরি হয় না। কিন্তু, মডার্নার ভ্যাকসিনের ডোজে রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হচ্ছে বয়স্কদের মধ্যেও। এই ট্রায়ালের প্রতিবেদন দেখে প্রবীণদের জন্যও ভ্যাকসিনের ডোজ নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে মডার্না।