করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির ক্ষেত্র তৈরির জন্য ভালো হবে : মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে এবং চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস। গতকাল বৃহস্পতিবার এক টিভি সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
এ সময় উইলবার রস বলেন, ‘সব মার্কিনির মধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য সহানুভূতি রয়েছে। এ জন্য এই দুর্ভাগ্যজনক ও মারাত্মক রোগ নিয়ে আমি বিজয়োল্লাস করতে চাই না।’
এ সময় করোনাভাইরাস চীন ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে উল্লেখ করে রস দাবি করেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে ব্যবসাক্ষেত্রে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি উত্তর আমেরিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ এবং মেক্সিকোর কিছু অংশেও পুনরায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করবে।’
এরপর তিনি করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করা ‘আফ্রিকান সোয়াইন ভাইরাস’ ও ২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের সঙ্গে তুলনা করেন এবং এ ভাইরাসটি আরো একটি ঝুঁকির কারণ বলেও উল্লেখ করেন।
এদিকে, চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯ হাজার ৭০০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে করোনাভাইরাসের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় অন্তত এক লাখ দুই হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
এরই মধ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে চীনের সব প্রদেশ ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে। এর ফলে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে রেল ও ফেরি যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে হংকং। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বন্ধ রয়েছে যুক্তরাজ্যসহ জার্মানির লুফথানসা, অস্ট্রিয়ান ও সুইস এয়ারলাইনসের যোগাযোগ।
এদিকে ১৮টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৯৮ ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে চীনের বাইরে এই ভাইরাস সংক্রমণে কেউ মারা যাননি। চীনের বাইরে আক্রান্তদের বেশির ভাগই চীনের উহান শহর থেকে আসা।
বাড়তে থাকা এই ভাইরাস মোকাবিলার অংশ হিসেবে চীনে সেনাবাহিনীর বিশেষ দলসহ অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন চিকিৎসকরা। এ ভাইরাসে আক্রান্তের পর সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরছেন অনেকে।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা এক নারীর সন্তান বলেন, ‘বিশ্বাস ছিল বরাবরই। এই বিশ্বাস দেশ ও আমাদের চিকিৎসকদের ওপর। তাঁদের জন্যই মা ভালো হয়ে গেছেন খুব দ্রুত।’
এদিকে চীনের উহানসহ কয়েকটি নগরীতে আটকা পড়ে আছেন অন্তত ৫০ লাখ বাসিন্দা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফাঁকা রয়েছে মহাসড়কগুলো। কাজ ছাড়া খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকায় নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা—ডব্লিউএইচও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই (জরুরি অবস্থা) ঘোষণার মূল কারণ চীনে যা ঘটছে তা নয়; বরং অন্যান্য দেশে যা ঘটছে, সেটা।’
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যেসব দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, সেসব দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।