করোনাভাইরাস : যেসব বিষয়ে জানা প্রয়োজন

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে যে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে তাতে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সংক্রমিত হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ।

ভাইরাসটি কোনো একটি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে এবং একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ছড়াতে আবার নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয়ে থাকে মিউটেশন। খবর : বিবিসি।

তাই এই ভাইরাস অল্পদিনের মধ্যেই আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু এ ভাইরাসটির প্রকৃতি ও কীভাবেই তা রোধ করা যেতে পারে সে বিষয়ে এখন বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।

সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) বা ইবোলার মতো নানা ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাসের খবর প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসে, করোনাভাইরাস তার মধ্যে সর্বশেষ।

করোনাভাইরাস কী এবং কীভাবে ছড়ায়?

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।

ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটিও এক ধরনের করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে এরইমধ্যে ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

এই ভাইরাস খুব দ্রুত একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে পারে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। 

এটি মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় ও শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

এক দশক আগে সার্স নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস ছিল। এতে আক্রান্ত হয়েছিল আট হাজারের বেশি মানুষ।

এছাড়া, ২০১২ সালে অন্য একটি ভাইরাসজনিত রোগ মিডল ইস্টার্ন রেস্পিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স- এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।

আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে কী লক্ষণ দেখা যায়?

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। কিন্তু এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া ও মৃত্যু ঘটতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এর এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।

এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক সেটিও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই শতাংশ মারা গেছেন ও মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এমন মৃত্যুও হয়ে থাকতে পারে যা চিহ্নিত করা যায়নি, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাই এ ভাইরাস ঠিক কতটা ভয়ংকর তা এখনো স্পষ্ট নয়।

যেভাবে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি :

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। গত ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে চীন কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি এতে প্রথমবারের মতো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ঠিক কীভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনো নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।

তবে তাঁরা বলছেন, কোনো প্রাণী এই ভাইরাসের উৎস ছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনো মানুষের দেহে ঢুকেছে ও পরে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।

সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় ও পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মার্স ভাইরাস ছড়ায় উট থেকেও।

এর সঙ্গে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল এমন লোকদের সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো।

কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনাভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে জ্যান্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ ও সাপ বিক্রি হতো। এগুলোর কোনো একটি থেকে নতুন এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ওই ব্যক্তি উহানে গিয়েছিলেন বলেও জানানো হয়।

এর চিকিৎসা কী?

যেহেতু ভাইরাসটি নতুন, তাই এখন পর্যন্ত এর কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন নেই এবং এমন কোনো চিকিৎসা নেই যা এ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় কী?

একমাত্র উপায় হলো যারা এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন বা এই ভাইরাস বহন করছেন তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় বলেছেন, হাত সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও বার বার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষা যাবে না, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, অন্যের সংস্পর্শ এড়াতেও মুখোশ পরুন।’

এদিকে উহান শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী নিজেরাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।