করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ফ্রান্সের ৯ শহরে কারফিউ, লঙ্ঘনে অর্থদণ্ড

Looks like you've blocked notifications!
করোনাভাইরাসের এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলো নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে। ছবি : সংগৃহীত

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়তে থাকায় ফ্রান্সে কারফিউ জারির ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি জানিয়েছেন, প্যারিসসহ ৯টি শহরে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ‌ থাকবে। আগামী শনিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হবে এই কারফিউ। অন্তত চার সপ্তাহ কারফিউ চলবে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে গতকাল বুধবার কারফিউর পাশাপাশি গণস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করেন। ম্যাক্রোঁ জানান, প্রত্যেককে কঠোরভাবে সরকারি এই নির্দেশ মেনে চলতে হবে।

এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনাভাইরাসের এই (দ্বিতীয়) ঢেউ সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সংক্রমণ সীমাবদ্ধ নেই। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী, প্যারিস ছাড়াও রাতে কারফিউ থাকবে মার্সিলে, লিয়ন, লিলি, সেন্ট-এটিন, রুউন, টুলাউস, গ্রেনোবল ও মন্টপিলিয়ারে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, প্রয়োজনে কারফিউর মেয়াদ ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ম্যাকরন এদিন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া কারফিউর সময় কেউ বাড়ির বাইরে যেতে পারবেন না। কারফিউর আগেই প্রয়োজনীয় যাবতীয় কাজ সেরে ফেলতে হবে। তবে, দিনের বেলা লোকজন এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যেতে পারবে। সে ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে না। খোলা থাকবে স্কুলও।

কারফিউ ঘোষণার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, একে আটকানো দরকার। এর জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কারফিউ-সংক্রান্ত নির্দেশ লঙ্ঘন করলে আর্থিক জরিমানার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। জরিমানার অঙ্ক ১৩৫ ইউরো বা ১২১ পাউন্ড। সেইসঙ্গে আরো অনেক বিধিনিষেধও আরোপ হয়েছে। খুব বড় বাড়ি ছাড়া ছয়জনের বেশি জড়ো হওয়া যাবে না।

এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘সমাধান খুঁজতে আপনাদের প্রত্যেককে আমার দরকার। আমাদের একে অপরকেও প্রয়োজন রয়েছে। সম্মিলিতভাবেই আমরা সমাধানের রাস্তা পাব।’

জানা গিয়েছে, ফ্রান্সে এখনো ৯ হাজার ১০০ জন কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গত জুনের পর এত সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে ছিল না। ফ্রান্সে গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার) ২২ হাজার ৯৫১টি পজিটিভ কেস ধরা পড়ে।

গোটা ইউরোপজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ বা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ আঘাত হেনেছে। যে কারণে ইউরোপের দেশগুলোতে দ্রুত হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ইতালি থেকে শুরু করে জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ও নেদারল্যান্ড—সর্বত্র একই চিত্র।

করোনাভাইরাসের এই দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলো নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে শুরু করেছে।

জার্মানি ঘোষণা করেছে, সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পানশালা ও রেস্তোরাঁ বেশি সময় খোলা রাখা যাবে না।

গত এপ্রিলের পর থেকে গতকাল বুধবার জার্মানিতে প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল গতকাল বুধবার কড়া বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, এক লাখ বাসিন্দার কোনো এলাকায় ৫০ জনের বেশি করোনায় আক্রান্ত হলে সে এলাকার পানশালা ও রেস্তোরাঁ রাত ১১টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া দুই বাড়ি মিলে ১০ জনের বেশি একসঙ্গে জড়ো হওয়া যাবে না।

ইউরোপের আরেক দেশ নেদারল্যান্ডসে আংশিক লকডাউন জারি রয়েছে। প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে লকডাউন চলছে। ক্যাফে থেকে রেস্তোরাঁ রাত ১০টার আগেই সব বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে কোভিড-১৯ নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়ায় স্পেনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল কাতালোনিয়ায় আগামী ১৫ দিনের জন্য পানশালা ও রেস্তোরাঁ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

করোনার সংক্রমণ বাড়ায় চেক প্রজাতন্ত্রে আবারও স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে সেখানকার পানশালাও।

গোটা ইউরোপে সংক্রমণের হার বাড়ছে। রাশিয়ায় গতকাল বুধবার ১৪ হাজার ৩২১ পজিটিভ কেস ধরা পড়ে। একদিনে সে দেশে করোনায় মারা গেছে ২৩৯ জন। একটানা দুসপ্তাহ ধরে ইউরোপের দেশগুলোতে সর্বাধিক হারে করোনার সংক্রমণ হচ্ছে। প্রতি এক লাখে পজিটিভ কেস ৫৮১ দশমিক ৩।