করোনায় আক্রান্ত গায়িকার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ, আতঙ্কে বহু রাজনীতিক
ভারতীয় গায়িকা কণিকা কাপুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শরীরে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। আর এরপরই তৎপর হয়ে উঠেছেন রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও তাঁর ছেলে সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহসহ একাধিক রাজনীতিক। তাঁরা সবাই লক্ষ্ণৌতে এক নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন কণিকার সঙ্গে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, কণিকার ওই নৈশভোজে ছিলেন মন্ত্রী ও আমলারাও। কোনো কোনো গণমাধ্যমের দাবি, সেখানে প্রায় ২০০ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এরপর গত বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে প্রাতরাশের আমন্ত্রণে উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানের সাংসদরা রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে সাংসদ দুষ্মন্ত সিংহও অংশ নেন। কণিকার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবরে স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিনে গেছেন দুষ্মন্ত সিংহ। রাষ্ট্রপতিসহ অন্য সাংসদরাও আতঙ্কে আছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস আছে কি না, তা পরীক্ষা করাবেন বলে জানা গেছে।
দুষ্মন্তের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার খবরে সেদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ান এবং আপনা দলের সাংসদ অনুপ্রিয় প্যাটেলসহ বেশ কয়েকজন কোয়ারেন্টিনে গেছেন।
বসুন্ধরা রাজে টুইটে বলেছেন, ‘লক্ষ্ণৌয়ে থাকাকালে আমি একটি নৈশভোজে অংশ নিই আমার ছেলে দুষ্মন্ত ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকের সঙ্গে। কণিকা দুর্ভাগ্যজনকভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কণিকা সেখানে অতিথি ছিলেন। সাবধানতা অবলম্বন করতে আমার ছেলে ও আমি তৎক্ষণাৎ নিজেদের কোয়ারেন্টিনে রাখি। এবং আমরা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।’
সম্প্রতি লন্ডন থেকে ভারতে ফেরেন কণিকা। যদিও বিদেশ থেকে ফেরার বিষয়টি তিনি নাকি গোপন করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দুই থানায় দুটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
বলিউড ইন্ডাস্ট্রির তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যার করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। লন্ডন থেকে ফেরার পর তিনি বিলাসবহুল একটি পাঁচতারকা হোটলে পার্টি দেন। সেখানে অনেক ক্ষমতাবান মানুষ গিয়েছিলেন। এ বিষয়টা সামনে আসতেই মানুষ কণিকার দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন। কেন কোয়ারেন্টিনে না গিয়ে তিনি পার্টি করছিলেন?
‘বেবি ডল’ বা ‘চিটিয়া কালাইয়া বে’র মতো জনপ্রিয় গানগুলো গেয়েছেন এই গায়িকা। লন্ডন থেকে ফিরে লক্ষ্ণৌয়ে বাড়িতে ছিলেন তিনি। করোনায় আক্রান্ত হওয়া নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কণিকা কাপুর বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে লন্ডনে ছিলাম। আমি নিয়মিত লন্ডন আর লক্ষ্ণৌতে যাতায়াত করি। গত ৯ মার্চ এয়ারপোর্টে নামি। তখন আমাকে একটা ফরম পূরণ করতে হয়। সেখানে আমার ভ্রমণের সব তথ্য দিতে হয়। সে সময় আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আমাকে কেউ বলেনি কোয়ারেন্টিনে যেতে। আমার শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ ছিল না। আমি লন্ডন থেকে মুম্বাই হয়ে লক্ষ্ণৌ আসি। এখানে আমার মা-বাবা আছেন। আমি তাঁদের সঙ্গে দেখা করি। এখানে আমার নিজের বাড়িও রয়েছে। আমার ছোটবেলার এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। সে জন্য একটা ছোট গেট-টুগেদার হয়। যেখানে বন্ধুর বাবা-মা, আমার বাবা-মা এবং সামান্য কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তেমন কোনো বড় পার্টি নয়। এরপর ১৩ মার্চ আমার নিজের সন্দেহ হয় যে আমার করোনা নেই তো। তখন আমি ফোন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আমার করোনা পরীক্ষার কথা বলি। টেস্টে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তবে আমাকে একবারের জন্যও কেউ হোম কোয়ারেন্টিনে যেতে বলেনি।’
ভারতীয় সংগীতশিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী রাজনীতিবিদ ও সংস্কৃতিকর্মীরা বেশ আতঙ্কে আছেন।