করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে, হোয়াইট হাউসের শঙ্কা
ইতালি ও স্পেনের পর এবার করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে গতকাল মঙ্গলবার একদিনেই করোনায় ৮০০ জনের বেশি মারা যাওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। হোয়াইট হাউস গতকাল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ অনুশাসন মেনে চললেও করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগে দেশটিতে এক লাখ থেকে সর্বাধিক দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
হাসপাতালে রোগীদের সংকুলান হচ্ছে না। তাই স্টেডিয়াম, পার্ক ও প্রমোদতরীকে হাসপাতালে রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, এমন চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের। এক মাস আগেও পরিস্থিতি এতটা ভয়ানক হবে, তা চিন্তা করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-নাইনটিনের ভয়াল প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হচ্ছে মার্কিনিদের কাছে। সর্বাধিক করোনায় আক্রান্ত দেশটিতে নেই প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামও। সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণের অনুশাসন বাড়ালেও সংক্রমণ কমছে না দেশটিতে। মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র।
এর মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার ভয়ানক আশঙ্কার কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মেনে চললেও কোভিড-নাইনটিনে দেশটিতে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হবে।
হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ড. ডেবোরা বার্ক্স বলেন, ‘ইতালি ও অন্য দেশগুলোতে যে অবস্থা, তার পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করছি, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারিতে এক থেকে দুই লাখের মতো মানুষ মারা যাবে। আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা বাড়াচ্ছি। নাগরিকরা নির্দেশিত নিয়মকানুন মেনে চলছে। কিন্তু তারপরও প্রাণহানি এ অনুমানের মধ্যেই থাকবে।’
ড. ডেবোরা বার্ক্স আরো বলেন, ‘কোনো ম্যাজিক ভ্যাকসিন বা থেরাপি নেই। আমাদের আচরণই বলে দেবে আগামী ৩০ দিনে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে।’ জোরালোভাবে সামাজিক বিচ্ছিন্নকরণ বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়ে ড. ডেবোরা বার্ক্স একটি চার্টের মাধ্যমে দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের করোনায় মৃত্যু হতে পারে।
এদিকে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গতকাল মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহ খুব, খুব যন্ত্রণাদায়ক হতে যাচ্ছে। আগামী দিনে যে কঠিন দিন আসতে যাচ্ছে, সে জন্য সব আমেরিকানকে প্রস্তুত থাকতে বলছি।’
এদিকে, ইউরোপেও থামছে না করোনার ত্রাস। ইতালি ও স্পেনে মৃতের সংখ্যার নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলের এ প্রতিযোগিতায় নতুন দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স। গতকাল মঙ্গলবার সেখানে আটশর বেশি মানুষের মৃত্যু নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে।
এ অবস্থায় করোনাভাইরাসকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সংকট বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘কোভিড-নাইনটিন সবার শত্রু। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যেই এ রোগের সংক্রমণ ঘটছে। নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং যুদ্ধকবলিত দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। বিরোধ-বিদ্বেষ ভুলে এ রোগ মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এখন সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময় পার করছে বিশ্ব।’
এশিয়ায় এ মহামারি এখনো মন্থর গতিতে এগোলেও সামনের সময়টা বেশ কঠিন হবে বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাই আগেভাগে সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিচ্ছে সংস্থাটি বারবার। করোনার সংক্রমণের কারণে সৌদি আরবে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সম্মিলন হজ পালনের বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সৌদি সরকার এ বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা না করতে অন্য দেশগুলোকে বার্তা দিয়েছে।