করোনা আক্রান্ত মাকে ওয়াকিটকিতে শেষ বিদায় জানাল সন্তানেরা
কয়েক সপ্তাহ আগেই স্যান্ডি রটার জানতে পারেন, তাঁর স্তন ক্যানসার হয়েছে। সেটা ছিল একেবারে শেষ পর্যায়ে। এ সময় তিনি হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এই সময়টায় সারা বিশ্ব তো বটেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় পার করছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে লাশের সারি। স্যান্ডি রটারও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন।
আর এ কারণেই স্যান্ডি রটার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কোনোভাবেই প্রিয় সন্তানদের কাছে আনতে পারছিলেন না, তাঁদের মুখ দেখতে পারছিলেন না। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে, সেই ভয়ে ছয় সন্তানকেও স্যান্ডি রটারের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
তাহলে মা কি শেষবারের মতো সন্তানদের আদর করে যাবেন না? কিংবা সন্তানেরা কি তাদের প্রিয় মাকে বিদায়বেলায় ভালোবাসার কথা বলবে না? সন্তান আর মায়ের সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য বিকল্প পথে হাঁটল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে মায়ের কেবিনের জানালার ওপার থেকে ওয়াকিটকিতে শেষবারের মতো করোনাভাইরাস আক্রান্ত মায়ের সঙ্গে কথা বলল সন্তানেরা, জানাল ভালোবাসার কথা।
৪২ বছর বয়সী স্যান্ডি রটার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনের বাসিন্দা। গত ১৬ মার্চ তিনি এভারেট এলাকার প্রভিডেন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার আগে তিনি ওয়াকিটকিতে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত বুধবার সিএনএনের সাংবাদিক এলিসিন ক্যামেরোটা ওই নারীর ছেলে এলিজা রস-রটারের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় এলিজা বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি ওয়াকিটকির ব্যবস্থা করে। সেটা মায়ের বালিশের ওপর রাখা হয়। আর আমরা এদিক থেকে বিদায়ের বেলায় কিছু কথা বলি। জানালার এপার থেকে মাকে বলতে পেরেছি, মা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এটা অনেক কঠিন ছিল। এমন সময় আসলে কী যে বলা যায়, তা কেউ জানে না।’
এ সময় এলিজা তাঁর মাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তাঁরা ভালোভাবে জীবনযাপন করবে এবং সব সন্তানই ভালো থাকবে। তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।
ওই নারীর সন্তানেরা ১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী। আট বছর আগেই তারা তাদের বাবাকে হারায়।
যুক্তরাষ্ট্রে আজ রোববার পর্যন্ত তিন লাখ ১১ হাজার ১৭৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আট হাজার ৮০২ জন মারা গেছেন।
এদিকে বিশ্বে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৬৫ হাজার ৫৫৮ জন। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৯ হাজার ৮৬৩ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন দুই লাখ ৪৯ হাজার ৭০৮ জন।