করোনা আতঙ্ক : লোকজন টয়লেট পেপার মজুদ করছে কেন?
বড় কোনো বিপর্যয়ের কথা বললে হয়তো অনেকের মনে যে পরিস্থিতির কথা মাথায় আসতে পারে তা হলো—আপনি টয়লেটে বসে আছেন। কিন্তু দেখলেন ট্যাপে পানি নেই, টিস্যুও পেপারও ফুরিয়ে গেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অনেক অস্ট্রেলিয়ান এ মুহূর্তে এমন দুঃস্বপ্নই দেখছেন। টয়লেট টিস্যু পেপার নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন অনেক অস্ট্রেলিয়ান।
অস্ট্রেলিয়াবাসীর কাছে টয়লেট পেপার হয়ে উঠেছে সবচেয়ে আরাধ্য সামগ্রীগুলোর একটি। তাঁরা সুপারমার্কেটে গিয়ে ট্রলি বোঝাই করে টয়লেট পেপার কিনে মজুদ করা শুরু করেছেন। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষ বারবার বলছে, দেশে টয়লেট পেপারের কোনো সংকট নেই। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াবাসীর ব্যবহৃত বেশিরভাগ টয়লেট পেপারই স্থানীয়ভাবে তৈরি। দেশটির সবচেয়ে বড় নগরী সিডনির সুপারমার্কেটে টয়লেট পেপারের জন্য নির্দিষ্ট তাকগুলো মুহূর্তেই খালি হয়ে যাচ্ছে। ফলে একটি সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ নিয়ম করেছে যে একজন চার প্যাকেটের বেশি টয়লেট রোল কিনতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ায় এখন ‘টয়লেটপেপারক্রাইসিস’ ও ‘টয়লেটপেপারগেইট’ হ্যাশট্যাগ দুটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ডিংয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
দেশটিতে পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে যে মানুষ পাবলিক টয়লেট থেকে টয়লেট পেপারের রোল চুরি করছে, এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
অবশ্য টয়লেট পেপার নিয়ে এমন হুলস্থুল কাণ্ড কেবল অস্ট্রেলিয়াতেই প্রথম নয়। এর আগে সিঙ্গাপুর, জাপান ও হংকংয়েও এমন হয়েছে। গত মাসে হংকংয়ে সশস্ত্র ডাকাতদলের টয়লেট পেপার লুট করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও আতঙ্কিত লোকজন টয়লেট পেপার কিনে মজুদ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, টয়লেট পেপার মজুদের হিড়িক পড়ায় অনেকেই যারপরনাই বিরক্ত। কেউ কেউ এ নিয়ে অনলাইনে নানা কৌতুকও করছেন। ফেস মাস্ক, তরল সাবান বা জীবাণুনাশক লোশন যেখানে করোনাভাইরাস ঠেকাতে কিছুটা ভূমিকা রাখে, সেখানে টয়লেট পেপার নিয়ে কেন এত টানাটানি, সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। বাড়িতে টয়লেট পেপার শেষ হয়ে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা যে আছে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যের পার্থে গত রোববার ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩ জন। মারা গেছেন দুজন। তবে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর চীন থেকে কারো অস্ট্রেলিয়া আসায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে অন্যান্য দেশের তুলনায় সংক্রমণের ঘটনা এখনো অনেক কম।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে তিন হাজার ২৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে চীনে মোট মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার পেরিয়েছে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। এ ছাড়া দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৪০৯ জনে। এর মধ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।