করোনা ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সৌদির এক কোটি ডলার অনুদান

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাস রোধে কার্যকর পদক্ষেপ, গবেষণা ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সহায়তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) এক কোটি মার্কিন ডলার অনুদানের ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য কোনো দেশের অনুদানের ঘোষণা এটিই প্রথম। সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা উকাজ গতকাল সোমবার রাতে এ খবর জানিয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে সৌদি সরকার দ্রুত সাড়া দিয়েছে।

সৌদি আরবের রাজকীয় অধিদপ্তরের উপদেষ্টা এবং বাদশাহ সালমান মানবিক সহায়তা ও ত্রাণকেন্দ্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ আর-রায়িয়া বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ অনুদান মানবসেবার প্রতি সৌদি আরবের দায়বোধ থেকে করা হয়েছে। মানবসমাজে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের জন্য দেশটির সামর্থ্য ও অর্থকে কাজে লাগানোর বিষয়টি এর মাধ্যমে আবারও প্রতিফলিত হলো। এ ছাড়া মানব সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘ এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সমসহযোগী হয়ে কাজ করতে দেশটি বদ্ধপরিকর।’

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত সৌদি আরবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে ওমরাহ ও পর্যটকদের নিষিদ্ধ করা হয়। সৌদিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৭ জনে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৩৬ জনে। দেশটিতে একদিনে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন বেড়ে পৌঁছেছে ৮০ হাজার ৭৫৪ জনে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।

এরই মধ্যে বিশ্বের ১০৯টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। চীনে পরিস্থিতির অগ্রগতি হলেও বিশ্ব পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণহীন আর অরক্ষিত। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইতালি। দেশটিতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ১৭২ জনে।

এমন পরিস্থিতিতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ইতালি সরকার। এর আগে দেশটির ১৪টি অঞ্চলের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই এবার পুরো ইতালির জনগণকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে জনসমাগম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া, স্পেনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩১ জনে।

ইরানেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃতের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। দেশটির সরকারি হিসাবে, মৃতের সংখ্যা ৪২ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৭ জনে। এ ছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ১৬১ জন। সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে ইউরোপগামী সব ফ্লাইট বাতিল করতে যাচ্ছে তেহরান। এ ছাড়া করোনা আতঙ্কে ৭০ হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইরান।

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের হার আগের চেয়ে অনেক কমেছে। দুই সপ্তাহের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫৪ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৫১৩ জন।

অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলেও সংক্রমণের আতঙ্কে বিদেশি দূতাবাসগুলো সোমবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। সেই সঙ্গে কূটনীতিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। এ ছাড়া ৩৪টি অঙ্গরাজ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। নিউইয়র্কে বাতিল করা হয়েছে স্কুল-কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা।

এদিকে রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মার্কিন দুই কংগ্রেস সদস্য নিজেরাই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন। এ ছাড়া চলতি মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইন্ডিয়ান ওয়েলস টেনিস টুর্নামেন্টও বাতিল করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ভাইরাসটির আতুরঘর চীন এই মহামারির ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে। নতুন করে আক্রান্ত কমে আসায় উহানের অস্থায়ীভাবে খোলা হাসপাতালগুলো গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কাতার। গতকাল সোমবার থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অন্য দেশগুলো মধ্যে রয়েছে চীন, মিসর, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন, নেপাল, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া ও থাইল্যান্ড। এ ছাড়া সতর্কতার অংশ হিসেবে ইতালির সঙ্গে এরই মধ্যে বিমান চলাচল স্থগিত করেছে কাতার এয়ারওয়েজ।

বিশ্ব অর্থনীতিতে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বিশ্ব শেয়ারবাজারের গতকাল ব্যাপক দরপতন হয়েছে। অস্থির হয়ে পড়েছে তেলের বাজারও।