করোনা থেকে সেরে ওঠার পর হতে পারে পারোসমিয়া

Looks like you've blocked notifications!
যুক্তরাজ্যএ করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও স্বাদ-গন্ধহীন থাকা দুই বোন ক্রিস্টি ও লরা। ছবি : সংগৃহীত

কোভিড-১৯ আক্রান্তেরা অনেকেই স্বাদ বা গন্ধ সাময়িক হারিয়ে ফেলে। কিন্তু যখন তারা সুস্থ হয়ে ওঠে, তখন স্বাভাবিকভাবে আবার মুখের স্বাদ বা গন্ধ ফিরে পায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখন ভিন্ন ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে এ কথা জানানো হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, খাবার, সাবান বা প্রিয়জনের গায়ের গন্ধ— যেগুলোর স্বাদ বা গন্ধ আগে তাদের কাছে দারুণ মনে হতো— এর সবকিছুই করোনা থেকে সেরে ওঠা কারো কারো কাছে বিস্বাদ হয়ে পড়ছে। আর এটিকেই বলা হচ্ছে পারোসমিয়া। এই পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে, কেন এটি হচ্ছে, আর এর সমাধানই বা কী।

যুক্তরাজ্যের নারী ক্লেয়ার ফ্রির তেমনই একজন। যিনি এখন পরিবারের জন্য রান্নার চেষ্টা করলেই সেটি শেষ পর্যন্ত কান্নায় রূপ নিচ্ছে। সাত মাস ধরে পারোসমিয়ায় ভুগছেন ৪৭ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, ‘গন্ধ আমাকে হতবিহ্বল করে তোলে।  পচা গন্ধে ঘর ভরে যায়, অসহ্য লাগে। পেঁয়াজ, কফি, মাংস, ফল, অ্যালকোহল, টুথপেস্ট, ক্লিনিং উপকরণ কিংবা পারফিউম—সব কিছুতেই বমি ভাব চলে আসে, এমনকি ট্যাপের পানিও। যার ফলে কোনো কিছু ধোয়াটাও কঠিন হয়ে ওঠে। এমনকি আমার পার্টনারকে চুমু পর্যন্ত খেতে পারছি না।’

গত বছর মার্চে ক্লেয়ার ফ্রির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সে সময় স্বাদ ও গন্ধ হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর মে ও জুনের মধ্যে স্বাদ-গন্ধ আবার ফিরে এলেও ক্লেয়ারকে তাঁর প্রিয় জিনিসগুলো থেকে দূরে সরে যেতে হয়। এখন বলতে গেলে পাউরুটি আর মাখন খেয়ে বেঁচে আছেন। কারণ, কেবল এগুলোর গন্ধই তিনি সহ্য করতে পারছেন।

ক্লেয়ারের চিকিৎসক বলছেন, তিনি এমন পরিস্থিতি আর কখনো দেখেননি।

ভীত ও হতভম্ব ক্লেয়ার ঘ্রাণশক্তি হারানো বিষয়ক চ্যারিটি অ্যাবসেন্ট-এর মাধ্যমে একটি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেছেন, যার সদস্য প্রায় ছয় হাজার। এদের প্রায় সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছিলেন এবং পরে পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হন। অনেক সময় তাঁরা গন্ধ কেমন পাচ্ছেন, সেটা বোঝানোও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ এর আগে এমন কোনো অভিজ্ঞতা না থাকায়, বর্ণনার জন্য যথাযথ শব্দও তাঁরা খুঁজে পান না।

বিবিসি জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অন্তত ৬৫ ভাগ স্বাদ গন্ধ হারিয়েছে। আর, এদের মধ্যে অন্তত ১০ ভাগ হয়তো পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বা ফ্যান্টসমিয়ায় ভুগছেন। অর্থাৎ আশপাশে যা নেই, সেটারও গন্ধ পাচ্ছেন।

আর এটি সত্যি হলে, বিশ্বের অন্তত ৬৫ লাখ মানুষ এখন দীর্ঘমেয়াদী পারোসমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

রিডিং ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ড. জেন পার্কার পারোসমিয়া নিয়ে আগে থেকেই পড়াশোনা করছিলেন। অ্যাবসেন্ট পারোসমিয়া ফেসবুক গ্রুপের অনেকের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি এবং তাঁর গবেষণা সহযোগীরা।

পারোসমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কয়েকটি টিপস

• রুম বা ঘরের তাপমাত্রার খাবার খান

• ভাজা খাবার, রোস্ট মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, কফি ও চকোলেট পরিহার করুন।

• ভাত, নুডলস, দই, স্বাভাবিক পাউরুটি ও সেদ্ধ সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

পারোসমিয়া কেন হয়

এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, তা হলো স্নায়ুর ক্ষতির কারণে মস্তিষ্কের যেখানে গন্ধের সিগন্যাল পৌঁছালে নাকে গন্ধ পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে না। আবার দুর্ঘটনা বা ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার কারণে পরে অনেক সময় নার্ভ ফাইবার সংযুক্ত হয় ভিন্ন টার্মিনালের সঙ্গে। অনেকটা এক জায়গার তার আরেক জায়গায় সংযুক্ত হওয়ার মতো। ফলে মস্তিষ্ক সেটিকে গন্ধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে না।

তবে এটি ঠিক হতে কতদিন লাগতে পারে, তা বলতে পারেননি বিজ্ঞানী ড. জেন পার্কার। কারণ, এ নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। তিনি বলছেন, ‘স্মেল ট্রেনিং’ এ বিষয়টায় সহায়তা করতে পারে। যেমন, দরকারি জিনিসগুলোর নিয়মিত গন্ধ নেওয়া। যুক্তরাজ্যের ক্লেয়ার ফ্রির তাই-ই করছেন।

ক্লেয়ার ফ্রির বলছেন, লেবু, ইউক্যালিপটাস ও লবঙ্গের অল্প করে গন্ধ তিনি পাচ্ছেন, কিন্তু গোলাপের গন্ধ পাচ্ছেন না।

পারোসমিয়ায় আক্রান্ত দুই বোন ক্রিস্টি (২০) ও লরা (১৮) তাঁদের অবস্থাকে সহনীয় করতে একটি খাবার তালিকা ঠিক করে নিয়েছেন। তাঁদের মা-বাবা যখন মাছ নিয়ে আসে, তখন তাদের দৌড়ে গিয়ে জানালা খুলে দিতে হয়। লরার ভাষায়, এগুলোর গন্ধ খুবই বিরক্তিকর। উদ্ভিজ খাবারের স্বাদ কিছুটা ভালো। তবে মাংস এড়িয়ে চলতে হচ্ছে।

তেমনি ৪১ বছর বয়সী জাস্টিন হাইড তাঁর ২০২০ সালের মার্চে জন্ম নেওয়া মেয়ের কোনো গন্ধই উপভোগ করতে পারেননি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর জুলাই থেকে স্বাদ-গন্ধ ফেরত পেতে শুরু করেন জাস্টিন। কিন্তু, কফির গন্ধটি ক্রমেই অদ্ভুত থেকে বাজে মনে হতে থাকে তাঁর কাছে।