করোনা নিয়ন্ত্রণের ‘পরিসর সীমিত’ হয়ে পড়েছে, উদ্বেগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

Looks like you've blocked notifications!

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। চীন থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর এখন সরাসরি চীনের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হওয়া এবং অন্যান্য দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়াকে শঙ্কাজনক বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে এখন পর্যন্ত চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন টেড্রস আধানম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার ‘পরিসর সীমিত’ হয়ে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-নাইনটিন রোগটির লক্ষণ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস আধানম বলেন, চীনের বাইরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ‘তুলনামূলকভাবে কম’ হলেও, ভাইরাসে সংক্রমণের ধরনটি উদ্বেগজনক। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণ করা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ছাড়াও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’

এর পাশাপাশি ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি আরো দুজনের মৃত্যু এবং দেশটিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইরানের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, করোনাভাইরাস হয়তো এরই মধ্যে ‘ইরানের সব শহরে’ ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতালিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির ১০টি শহর অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ওই শহরগুলোর জনসমাগম স্থানগুলোতে সর্বসাধারণের উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি নিউজ গতকাল শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে।

এদিকে কোভিড-নাইনটিন নিয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছেন চীনের চিকিৎসকরা। কুড়ি বছর বয়সী এক তরুণী, দেহে কোনো রকম লক্ষণ ছাড়াই উহান থেকে কমপক্ষে ৪০০ মাইল দূরের একটি শহরে যাওয়ার পর, তাঁর মাধ্যমে পরিবারের পাঁচজন রোগটিতে আক্রান্ত হন। যা পর্যবেক্ষণ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, রোগটি নতুন নতুন লক্ষণ নিয়ে অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। যা আরো প্রাণঘাতী হতে পারে।

রোগটি যেন মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায়, সেটিই এখন সবচেয়ে জরুরী বলে মনে করেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু রোগটি এখন কোনো একটি দেশের মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নেই, তাই এ মুহূর্তে চীনের পাশে দাঁড়াতে দ্বিধা করা উচিত নয় বলে মনে করেন তাঁরা।

চীনের আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগ জিলিয়ান বলেন, ‘একাত্মতাই এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরী। অবশ্যই এমন কিছু (ব্যাপার) আছে, যা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে। তবে, সময়টা মোটেই সেসব নিয়ে কথা বলার জন্য উপযুক্ত নয়। কোভিড-নাইনটিন নিয়ন্ত্রণে কী করা উচিত এবং চীনের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, সেটাই ভাবাচ্ছে আমাদের।’

চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ১৫২ জন এবং মারা গেছেন আটজন।

চীন হুবেই প্রদেশ থেকে উৎপত্তি হওয়া নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬০ জনে। এ ছাড়া চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ হাজারেরও বেশি মানুষ।

চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ আজ শনিবার পর্যন্ত দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৭৬ হাজার ২৮৮ জন আক্রান্তের মধ্যে দুই হাজার ৩৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।