কিশোরী-তরুণীসহ ৯ জনকে খুন, জাপানে ‘টুইটার কিলারের’ মৃত্যুদণ্ড
‘টুইটার কিলার’ তাকাহিরো শিরাইশি (৩০)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে কেউ হতাশা বা আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই তাঁরা হয়ে উঠত জাপানের এই কুখ্যাত খুনির শিকার। টুইটারের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করত তাকাহিরো। তারপর তাদের বাড়িতে ডেকে এনে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নৃশংসভাবে খুন করত। এভাবে অন্তত ৯ জনকে খুনের অভিযোগে তাকাহিরোকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন টোকিওর একটি আদালত। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
তাকাহিরো শিরাইশির হাতে খুন হওয়া ৯ জনের মধ্যে একজন বাদে সবাই কিশোরী কিংবা তরুণী। বয়স ১৫ থেকে ২৬-এর মধ্যে।
আদালতে খুনের কথা স্বীকার করেছে তাকাহিরো। তবে তার আইনজীবীরা ফাঁসির বদলে কারাদণ্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন। আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, নিহতেরা টুইটারে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিল এবং হত্যায় তাদের সম্মতি ছিল। তাকাহিরো তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু বিচারক পর্যবেক্ষণে জানান, নিহত ৯ জনের কেউ খুনের সম্মতি দেয়নি। এমনকি, নিরব সম্মতিও দেয়নি। এই যুক্তিতে তাকাহিরোর প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়ে বিচারকের মন্তব্য, ‘৯টি তরতাজা প্রাণ শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ।’
তাকাহিরোর মূল নিশানা ছিল মানসিকভাবে দুর্বল কিশোরী বা তরুণীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ আত্মহত্যার ইচ্ছা বা হতাশা প্রকাশ করলেই তাদের সঙ্গে টুইটারের মাধ্যমে যোগাযোগ করত তাকাহিরো। তারপর তাদের আত্মহত্যার পরিকল্পনায় সাহায্য করবে বা নিজেও তাদের সঙ্গে আত্মহত্যা করবে বলে আশ্বস্ত করত। অবশেষে নিজের বাড়িতে ডেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে, হত্যা করত তাঁদের।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে অন্তত ৯টি খুন করে তাকাহিরো। তবে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে। তারপরই জাপানে তার নাম হয়ে যায় ‘টুইটার কিলার’।
চূড়ান্ত রায়ের দিন গতকাল মঙ্গলবার টোকিওর আদালতে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় চারশোর বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নিহতদের পরিজনেরা। নিহত এক তরুণীর বাবা বলেন, ‘এখনো মেয়ের বয়সি কাউকে দেখলেই মনে হয় আমার মেয়ে। মরলেও আমি ওকে (তাকাহিরো) ক্ষমা করব না। ফাঁসিই ওর উপযুক্ত শাস্তি।’
তাকাহিরোর হাতে এমন খুনের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই জাপানে চলছে আত্মহত্যা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক। যারা আত্মহত্যা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাদের কীভাবে সাহায্য করা যায় এবং যেসব ওয়েবসাইটে আত্মহত্যা বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি হয়—সেসবই এখন জাপানে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যা ঠেকাতে নতুন নিয়ম নীতি চালু করতে পারে জাপান সরকার।