ক্যাপিটলে দাঙ্গার নিন্দা জানালেন মার্কিন শীর্ষ সেনাকর্মকর্তারা
কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রতিটি শাখার প্রধান কর্মকর্তারা। এ ছাড়া নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পরবর্তী ‘কমান্ডার ইন চিফ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
চিঠি লিখে গত ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার ঘটনার নিন্দা করে মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্যাপিটলের ওই ঘটনা কেবল অন্যায় নয়, আইনবিরুদ্ধ। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মনে করেন সেনা কর্মকর্তারা। শুধু তা-ই নয়, চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, ট্রাম্প যা-ই দাবি করুন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক খারাপ ছিল, এমন কথা শোনা যায়নি। বরং আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং ইউরোপ থেকে সৈন্য ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনী। এবার সেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাই দাঙ্গার বিপক্ষে চিঠি লিখে ট্রাম্পকে বিড়ম্বনায় ফেললেন।
ক্যাপিটল ভবনে গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকেরা হামলা চালায়। সেখানে সে সময় জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি চলছিল। সিনেটে যৌথ কংগ্রেস অধিবেশন চলছিল। ঠিক তখনই ক্যাপিটলের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে ট্রাম্পের সমর্থকেরা। তাদের কারো কারো সঙ্গে অস্ত্রও ছিল। ভেতরে ঢুকে সিনেট হলে তাণ্ডব চালায় তারা। শুধু তা-ই নয়, কয়েকজন কংগ্রেস সদস্যের কার্যালয়ও তছনছ করে তারা। পুলিশ বাধ্য হয়ে দাঙ্গা পুলিশ ডাকে। গুলি চলে। এতে চারজনের মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয় ৬ জানুয়ারি।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই ক্যাপিটলের ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। রিপাবলিকানেরাও ঘটনার নিন্দা করেন। সাবেক প্রেসিডেন্টেরা দলমত নির্বিশেষে ঘটনার নিন্দা জানান। এবার সে তালিকায় যুক্ত হলো মার্কিন সেনাবাহিনী।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিটি শাখার চিফস অব স্টাফেরা নিন্দা জ্ঞাপন করা চিঠিতে সই করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু, প্রতিবাদের নামে সহিংসতার অধিকার নেই। এ কথা প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে। যারা গত ৬ জানুয়ারির ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ক্যাপিটলের দাঙ্গার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল এক সাবেক এয়ারফোর্স কর্মকর্তার। এয়ারফোর্সের ওই নারী ট্রাম্পভক্ত ছিলেন। সিনেট হলে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন তিনি। বাধ্য হয়েই পুলিশ গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে সেই ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, ওই ঘটনায় সরাসরি সেনাবাহিনীর নাম চলে আসাতেই দ্রুত বিবৃতি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানালেন বাহিনীর তিনটি শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এদিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার অভিশংসন প্রস্তাব পেশ করেছেন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যেরা।
এ ছাড়া এরই মধ্যে মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পদচ্যুত করতে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপিত প্রস্তাব পাস হয়েছে। হাউসে ২২৩-২০৫ ভোটে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে প্রস্তাবটি পাস হয়। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ কথা জানিয়েছে।
তবে এর আগেই গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ২৫তম সংশোধনী দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের উদ্যোগ তিনি নেবেন না। হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে একটি চিঠি লিখে ট্রাম্পকে অপসারণের প্রস্তাব আগাম নাকচ করে দেন পেন্স।
ডেমোক্র্যাট তো বটেই ২০ জানুয়ারির আগেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে অপসরণ করতে চাইছে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের একাংশ।