চলে গেলেন ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়
প্রয়াত হলেন ঔপন্যাসিক দেবেশ রায়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫০ মিনিট নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসংলগ্ন তেঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।
এর আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত মঙ্গলবার রাতে দেবেশ রায়কে স্থানীয় উমা নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনেও রাখা হয়েছিল।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন দেবেশ রায়। শরীরের ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন। তবে অসুস্থ হলেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। মাস দুয়েক আগে অসুস্থ সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষকে দেখতে যান তিনি। তাঁর ছেলে আমেদাবাদে থাকেন। লকডাউনের কারণে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কলকাতায় পৌঁছাতে পারেননি তিনি। আজ সকালে প্রয়াত দেবেশ রায়ের মরদেহ আনা হয় বাগুইআটির তেঘরিয়ার বল্মীকি আবাসনে। ওই আবাসনেই তিনি থাকতেন। সেখান থেকেই তাঁকে সৎকারের জন্য সরাসরি নিয়ে যাওয়া হবে কলকাতার রতনবাবু শশ্মানঘাটে।
বাংলা কথাসাহিত্যে একজন ব্যতিক্রমী ঔপন্যাসিক ছিলেন দেবেশ রায়। প্রথমে ‘দেশ’ পত্রিকায় গল্প লিখে তিনি বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ করেন। প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত পাশ্চাত্য মডেল বা ফর্মকে প্রত্যাখ্যান করে বাঙালির নিজস্ব মডেলে বা ফর্মে বাংলা উপন্যাসের ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থেকেই দেবেশ রায় নতুন ধরনের উপন্যাসের লাগাতার খোঁজ করেছেন।
দেবেশ রায়ের প্রথম উপন্যাস ‘যযাতি’। উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক জনজীবন নিয়ে লিখেছেন তিস্তাপারের বৃত্তান্ত। তাঁর জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গেই। তাঁর স্ত্রী কাকলি দেবী ২০১৭ সালে প্রয়াত হন। একমাত্র ছেলে দেবর্ষি কর্মসূত্রে থাকেন গুজরাটের আমেদাবাদের বরোদায়।
সাহিত্যিক মহলে লেখকদের লেখক বলা হতো দেবেশ বাবুকে। তাঁর নিজস্ব লেখার স্টাইলে এক অন্য ঘরানা তৈরি করে বাংলা সাহিত্যে, যা ভেঙে দেয় বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত ধারা।
১৯৯০ সালে তিস্তাপারের বৃত্তান্তের জন্য সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার পান দেবেশ রায়। ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, গল্পকারের পাশাপাশি তাঁর আরো একটি পরিচয় মনে রাখবে বাঙালি। ১৯৭৯ সাল থেকে এক দশক তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘পরিচয়’ পত্রিকা। অনেক লেখক তৈরি করেছেন তিনি সেই সময়। দেবেশ রায়ের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর।
বাংলাদেশের পাবনা জেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দেবেশ রায়। কিন্তু বেড়ে ওঠার সূত্রে উত্তরবঙ্গ ছিল তাঁর অন্যতম প্রেমের জায়গা। লেখার পাশাপাশি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে একটা সময় ট্রেড ইউনিয়ন করেছেন চুটিয়ে। তাঁর অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বরিশালের যোগেন মন্ডল, মানুষ খুন করে কেন, মফস্বলী বৃত্তান্ত, সময় অসময়ের বৃত্তান্ত, লগন গান্ধার, আত্মীয় বৃত্তান্ত। দেবেশ রায়ের প্রয়াণে বাংলা সাহিত্যের এক অন্য ইতিহাসের বৃত্তান্ত শেষ হয়ে গেল।