চীনের চেংদু কনস্যুলেট ছাড়ছেন মার্কিন কূটনীতিকরা
মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধ করতে বেইজিংয়ের নির্দেশের ডেটলাইন পার হওয়ার আগেই চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চেংদু কনস্যুলেট ছাড়তে শুরু করেছেন মার্কিন কূটনীতিকরা।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চেংদুর কনস্যুলেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল বেইজিং। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকালের আগে চেংদু কনস্যুলেট খালি করার নির্দেশনা ছিল। এর আগে সেখানকার কর্মীদের ফাইলের বাক্স ও আবর্জনার স্তূপ বহন করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
স্থানীয় মানুষ কনস্যুলেটের বাইরে জড়ো হয়ে চীনের পতাকা নাড়াচ্ছেন এবং সেলফি তুলছেন।
চীন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বা মেধা ‘চুরি’ করছিল, এ অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। কনস্যুলেট খালি করতে বেঁধে দেওয়া ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হয় গত শুক্রবার। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ভবনের দরজা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হিউস্টনের দূতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ চীন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ‘চুরি’ করছিল।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা হচ্ছে চীনবিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের একটা জগাখিচুড়ি পদক্ষেপ।’
বেশ কিছুদিন ধরেই পারমাণবিক শক্তিধর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
চেংদু থেকে সর্বশেষ যা জানা যাচ্ছে
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন কনস্যুলেট থেকে ট্রাক বেরিয়ে যাচ্ছে এবং কর্মীরা ভবন থেকে কূটনীতিক প্রতীকগুলো সরিয়ে ফেলছেন।
এ ছাড়া ভবনের বাইরে অনেক পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে, যারা দর্শনার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং যেকোনো ধরনের উসকানি ঠেকাতে চেষ্টা করছে।
তবে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, কনস্যুলেট থেকে একটি বাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যঙ্গাত্মক শব্দ ছুড়ে দেন জমায়েত ব্যক্তিরা।
হিউস্টন থেকে যখন চীনের কূটনীতিকরা কনস্যুলেট খালি করে চলে যাচ্ছিলেন, সেখানে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরাও তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।
১৯৮৫ সালে চেংদুর এই মার্কিন কনস্যুলেটটি স্থাপিত হয়েছিল। সেখান থেকে তিব্বতসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করা হতো। এ কনস্যুলেটে দুইশর বেশি স্থানীয় কর্মী কাজ করতেন। কনস্যুলেটটি বন্ধ করে দেওয়ার পর বেইজিংয়ে দূতাবাসের বাইরে চীনের মূল ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি কনস্যুলেট থাকছে। পাশাপাশি হংকংয়েও একটি মার্কিন কনস্যুলেট রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দূতাবাসের পাশাপাশি চীনের আরো চারটি কনস্যুলেট রয়েছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে কেন?
সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে।
প্রথমত, মার্কিন কর্মকর্তারা সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে যাওয়ার দায় চাপিয়েছেন চীনের ওপর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে আসছেন, ভাইরাসটি চীনের ল্যাবরেটরি থেকে ছড়িয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই বলেছে যে ভাইরাসটি ‘মানবসৃষ্ট বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত’ নয়।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ থেকে এক ধরনের শুল্কযুদ্ধেও লিপ্ত রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকেই অন্যায্যভাবে বাণিজ্য পরিচালনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির অভিযোগ করে আসছেন। তবে বেইজিংয়ের দাবি, অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান ঠেকানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের কারণ হংকংয়ে চীনের জারি করা নিরাপত্তা আইন। এ আইন বাস্তবায়ন করার পর যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলের বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা বাতিল করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরো একটি আইন প্রয়োগ করেছেন, যেটি অনুযায়ী হংকংয়ে মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে চীনের ঘরোয়া বিষয়ে ‘হস্তক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর সমুচিত জবাব দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে।