চীনের প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগাতে চায় ইউক্রেন
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রথম টেলিফোন সংলাপকে ঘিরে প্রত্যাশা বাড়ছে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চীনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সংকট মেটানোর আশা করছেন৷
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করার পর থেকে চীন একবারও সরাসরি নিন্দা তো করেইনি, বরং নানাভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে৷ উলটো পশ্চিমা বিশ্বকে বর্তমান সংকটের জন্য দাবি করে আসছে বেইজিং৷ ইউক্রেন সংকট মেটাতে নিজেকে ‘নিরপেক্ষ’ মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও তুলে ধরছে চীন৷ দেশটি ১২ দফা প্রস্তাবও পেশ করেছে৷ অথচ ইউক্রেন বার বার রাশিয়ার ওপর চীনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ অবশেষে বুধবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চীন ও ইউক্রেনের শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি৷ জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করে বলেন, তিনি চীনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সংকট মেটানোর চেষ্টা করবেন৷ গতকাল বুধবার রাতে ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘চীনের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে আবার সব নীতির শক্তি পুনর্বহাল করার সুযোগ এসেছে, যেগুলোর ভিত্তিতে শান্তি আসা উচিত৷’
শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ও যুক্তিপূর্ণ আলোচনা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে বলে আশা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি৷ শি জিনপিং ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষেও সমর্থন জানিয়েছেন বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেন৷
আলোচনার সময় শি জিনপিং ইউক্রেন ও অন্যান্য দেশের জন্য বিশেষ দূত পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি সংকটের রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে মতামত বিনিময়ের ওপর জোর দিয়েছেন৷ চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, চীনের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে সব পক্ষকে শান্ত থাকার ডাক দিয়েছেন৷ শি জিনপিং চীন ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি হিসেবে সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন৷
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিরোধ মেটানোর ক্ষেত্রে চীনের সাম্প্রতিক সাফল্য মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে৷ ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করতে বেইজিংয়ের উদ্যোগের জের ধরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণের পরিণতি নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ তবে ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে চীন অবদান রাখতে পারলে সেই তুলনায় ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ শি জিনপিং ও জেলেনস্কির আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে ইউক্রেনের সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি৷
জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসী হামলা বন্ধ করার ক্ষেত্রে চীনের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে৷ আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে রাশিয়া এই হামলা চালিয়েছে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন৷