টুইন টাওয়ারে হামলার জন্য জর্জ বুশ দায়ী : ট্রাম্প
একে একে ১৯টি বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার আজ ১৯তম বার্ষিকী। সারা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে সেদিন দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গর্ব টুইন টাওয়ারের ধসে পড়া, দেখেছিল মানুষের স্বাভাবিক জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে। তারপর দীর্ঘদিন সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতাও মানুষের আছে।
২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর সভ্যতার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত দিন। এদিন নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিতে হাইজ্যাক করা বিমান দিয়ে চালানো হয়েছিল নারকীয় হামলা। সে হামলায় মৃত্যুবরণ করেছিল প্রায় তিন হাজার মানুষ। অসহায় মানুষদের আর্তনাদে সেদিন ভারি হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর বাতাস। চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল সন্ত্রাসীদের তৎপরতা।
সে সময়ের পলাতক আল-কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন এ হামলায় সমর্থন ও অর্থায়ন করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে অনেক রাজনীতিও হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ হামলার দায় ওসামা বিন লাদেনের ওপর চাপালেও রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে মার্কিন রাজনীতিকরা একে অন্যকে দোষারোপ করতেও ছাড়েননি।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় সমর্থকদের প্রাথমিক ভোট অনুষ্ঠানের আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে এ হামলার জন্য দোষারোপ করা হয়েছিল।
এক বক্তব্যে তৎকালীন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার জন্য আরেক প্রার্থী জেব বুশের বড় ভাই জর্জ বুশের সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন। ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জেব বুশকে বলেন, ইরাক যুদ্ধের ব্যাপারে জনগণকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিল জর্জ বুশ জুনিয়র।
এ সময় জেব বুশ পাল্টা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে ট্রাম্প হট্টগোল শুরু করেন।
এ সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আপনার ভাই জর্জ বুশের শাসনামলেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বুশ আমাদের নিরাপত্তা দিতে পেরেছিলেন? না পারেননি।’
ট্রাম্প আরো বলেছিলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল কারণ বিল ক্লিন্টন ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেননি। ক্লিন্টনের সেই সুযোগ ছিল। অপর দিকে জর্জ বুশেরও সুযোগ ছিল লাদেনকে হত্যা করার, কিন্তু তিনিও তা করেননি এবং বুশ সিআইএর দেওয়া তথ্য আমলে নেননি।’
এরপর ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে বলুন কীভাবে বুশ আমাদের নিরাপত্তা দিলেন। ওই হামলায় আমি শত শত বন্ধুকে হারিয়েছিলাম।’
ট্রাম্প যোগ করেন, ‘ইরাকে হামলা চালানোটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভুল। জর্জ বুশ সেই ভুলের জন্য দায়ী। ইরাকে হামলা চালানো আমাদের কখনোই উচিত হয়নি।’
টুইন টাওয়ারে হামলার অভিযোগে ইরাক আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় ভুল তথ্যের কারণে ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আপনাকে বলতে চাই, ইরাকে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র আছে বলে সেসময় মিথ্যাচার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো অস্ত্র নেই।’
এ সময় ট্রাম্প জর্জ বুশের ভাই জেব বুশকেও মিথ্যাবাদী উল্লেখ করে বলেন, ‘তুমি সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী।’
দিনটি ছিল মঙ্গলবার। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল ভর্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর দিকের টাওয়ারে। উড়োজাহাজটি ১১০ তলা ভবনটির ৮০তম তলায় ঢুকে পড়ে। হামলার সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন শত শত মানুষ, ভবনের ভেতরে আটকে পড়েন আরো অসংখ্য মানুষ। ১৮ মিনিট পরে, সকাল ৯টা ০৩ মিনিটে দ্বিতীয় বিমানটি হামলা চালায়। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭৫-এর বোয়িং-৭৬৭ উড়োজাহাজ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ দিকের টাওয়ারের ৬০তম তলায় আঘাত হানে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টুইন টাওয়ারের উত্তর দিকের ভবনটি ভেঙে পড়ে। ভবনটি ধসে পড়ার সময় ভেতরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ছয়জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছিল। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর তৃতীয় হামলাটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনে। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত করে আমেরিকান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ৭৭-এর বোয়িং-৭৫৭ উড়োজাহাজটি। পেন্টাগনে হামলায় ১২৫ জন সামরিক কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন বলে জানানো হয়। জিম্মি করা বিমানটির ভেতরে থাকা ৬৪ জনও নিহত হন।
চতুর্থ বিমান হামলাটি হয় সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। নিউজার্সি থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিট পর ইউনাইটেড ফ্লাইট ৯৩ নামের উড়োজাহাজটি ছিনতাই করা হয়। বিমানে থাকা অবস্থাতেই যাত্রীরা নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার বিষয়ে জেনে যান। পরে পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার শ্যাংকসভিলের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানে থাকা ৪৪ জনের সবাই নিহত হন।
ইতিহাসের জঘন্য সেই হামলায় ১৯ জন হামলাকারীসহ মোট দুই হাজার ৯৭৭ জন নিহত হন। এর মধ্যে শুধু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চালানো দুটি বিমান হামলায় মারা যান দুই হাজার ৭৬৩ জন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। চারটি হামলায় সম্মিলিতভাবে ৭৮টি দেশের মানুষ নিহত হন। সূত্র : সিবিএস নিউজ