ট্রাম্প অভিশংসিত, আগামী মাসে প্রেসিডেন্ট পদের ভাগ্য নির্ধারণ
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্প তাঁর প্রেসিডেন্ট পদ হারান কি না। সেটি নির্ধারিত হবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট সদস্যদের ভোটে। নিম্নকক্ষের সদস্যদের ভোটে অভিশংসিত হওয়ার পর সিনেটে ভোট হবে আগামী মাসে।
প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য মার্কিন সংবিধানের দুটি অনুচ্ছেদ—ক্ষমতার অপব্যবহার করা ও কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া—অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়। এ দুই অভিযোগে হয় ভোটাভুটি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
প্রথমে অনুষ্ঠিত হয় ক্ষমতার অপব্যবহারের ওপর ভোটাভুটি। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৭টার কিছু আগে ভোটাভুটি শুরু হয়। এতে পক্ষে ২৩০টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৯৭টি। ডেমোক্র্যাটস দলের ২২৯ জন ও স্বতন্ত্র একজন সদস্য অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দেন ১৯৫ জন রিপাবলিকান সদস্য ও দুই ডেমোক্র্যাট সদস্য।
এর পর দ্বিতীয় অভিযোগে—কংগ্রেসের কাজ বাধাগ্রস্ত করা—ভোটাভুটি হয়। এতে পক্ষে ২১৪টি আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ১৫৬টি। অভিযোগের পক্ষে ভোট দেন ২১৩ জন ডেমোক্র্যাটস ও একজন স্বতন্ত্র সদস্য আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৫৩ রিপাবলিকান সদস্য ও তিনজন ডেমোক্র্যাটস।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে কংগ্রেসের বিতর্কটা শুরু হয় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বক্তব্য দিয়ে। প্রতিনিধি পরিষদের ওই বিতর্কে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। পেলোসি বলেন, ‘ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
এরপরই শুরু হয় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বিতর্ক। বিতর্কে ট্রাম্প কখনো ‘ক্ষমতার অপব্যবহারকারী’, কখনো ‘নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট’। ডেমোক্র্যাটদের তীব্র সমালোচনাকে ফিরিয়ে দিতে রিপাবলিকানরা ব্যবহার করছিলেন ট্রাম্প সম্পর্কে ইতিবাচক শব্দ। এর মধ্যে রিপাবলিকান সদস্য লডারমিল্ক ছিলেন বেশ সরেস। তিনি জানান, ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে যত সময় দিয়েছে, যিশুখ্রিস্টের বিচার যাঁরা করেছিলেন, তাঁরাও এর চেয়ে বেশি সময় দিয়েছিলেন যিশুকে।
আরেক রিপাবলিকান ক্রিস স্টুয়ার্ট বলেন, ‘ওসব ইউক্রেন বা এ রকম কিছু না। তারা (ডেমোক্র্যাট) প্রেসিডেন্টকে ঘৃণা করে। তারা মনে করে, আমরা বোকা। তারা মনে করে আমরা ভুল করছি। তারা মনে করছে, হিলারি ক্লিনটনেরই প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত।’
ক্ষমতার অপব্যবহার আর সংবিধান লঙ্ঘন শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। আল গ্রিন নামে এক ডেমোক্র্যাট বেশ জোরে জোরে বলছিলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) আইনের ঊর্ধ্বে নন।’
আরেক ডেমোক্র্যাট পিটার ডিফাজিও তো বলেই ফেললেন, ট্রাম্প হচ্ছে ভ্লাদিমির পুতিনের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) বন্ধু। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন দখলে নিয়েছিল রাশিয়া, ভ্লাদিমির পুতিন, আপনারা জানেন? সে ট্রাম্পের বন্ধু।’
মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের নেতা স্টেনি হয়ার বলেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসন বেছে নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এর (অভিশংসন) বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অসদাচরণ আমাদের এতে বাধ্য করেছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে বিতর্কের শেষ পর্যায়ে এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের একপর্যায়ে কংগ্রেসে স্বতন্ত্র সদস্য জাস্টিন অ্যামাশকে ধন্যবাদ জানান তিনি। অ্যামাশ ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
হয়ার জানান, তিনি কংগ্রেসে ৩৮ বছর ধরে আছেন। তাঁর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টকে এমন অন্যায় আচরণ করতে দেখেননি তিনি।
হয়ার আরো জানান, ইলেকটোরাল কলেজে ট্রাম্প বৈধভাবে জয় পেয়েছেন বটে, কিন্তু ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
হয়ারের পর কথা বলেন ওই পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি। তিনি বলেন, ‘এই অভিশংসনটি হচ্ছে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দলীয় পক্ষপাতদুষ্ট।’