তাপদাহে পুড়ছে পশ্চিম ইউরোপ, ছড়াচ্ছে উত্তরেও
ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদাহ এখন মহাদেশটির উত্তরাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
সোমবার ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য অতি উষ্ণতাজনিত সতর্কতা জারি করেছে এবং স্পেনের উত্তরাঞ্চল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৯ ফারেনহাইট) তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। মঙ্গলবার পশ্চিম ইউরোপে তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও গ্রিসে দাবানলের কারণে কয়েক হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
এদিকে, মঙ্গলবার তাপদাহের কারণে যুক্তরাজ্য ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন দেখেছে। এদিন যুক্তরাজ্যে ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা রয়েছে। আর ফ্রান্সের কিছু অংশ ‘বিপর্যয়মূলক উষ্ণতার’ মুখোমুখি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
ফ্রান্সের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, দেশটির বেশ কয়েকটি অংশ তাদের সবচেয়ে উষ্ণতম দিনগুলো পার করছে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নঁতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, দেশটিতে দাবানলের কারণে গত কয়েকদিনে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং তাদের জন্য জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে ফ্রান্সের দক্ষিণপশ্চিমের পর্যটন অঞ্চল জিঁহন্দের প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর এলাকা দাবানলে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে, দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জিঁহন্দ অঞ্চলের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সোমবার এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ছিল আর মঙ্গলবার তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু আবহাওয়ার শুষ্ক পরিস্থিতি ও পরিবর্তনশীল বাতাসের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি ফিরতে নাও পারে।
এদিকে, প্রচণ্ড উত্তাপে লন্ডনের লুটন বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ফ্লাইট স্থগিত করতে হয়। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ট্রেনসূচি বাতিল হওয়ায় যাতায়াতে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটে।
সোমবার নেদারল্যান্ডসে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ওয়েস্তদোর্পে তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও বেড়ে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এ তাপদাহের মধ্যে স্পেন ও পর্তুগালে এ পর্যন্ত এক হাজার জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্তুগালে তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা জুলাইয়ের সর্বোচ্চ।
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর আইপিএমএ দেশের অধিকাংশ এলাকাজুড়ে সর্বোচ্চ অগ্নি সতর্কতা জারি করেছে। দাবনলের বিপদ থেকে বাঁচাতে উত্তরাঞ্চলীয় মূর্সা শহর থেকে ৩০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ঘটনার পুনারাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে আছে, ওই বছর দাবানলে শহরটির ৬৬ জন বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছিল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তাপদাহ উত্তর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে বেলজিয়াম ও জার্মানি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখতে পারে। স্পেনে অন্তত ২০টি দাবানল নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় আছে। উত্তর দিকে পর্তুগাল সীমান্তের কাছাকাছি পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় আছে।