জাতিসংঘের গোপন নথির খবর

তালেবানের নিশানায় অনেকে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি

Looks like you've blocked notifications!
তালেবান ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনী বা সাবেক আফগান সরকারের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের খুঁজতে তালেবান ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক নথিতে সতর্ক করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘের নথিতে বলা হয়েছে, তালেবান তাদের নিশানা করা মানুষজনকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজছে এবং সংশ্লিষ্টদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে।

যদিও কট্টর ইসলামপন্থি তালেবান গোষ্ঠী সম্প্রতি আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা ‘প্রতিশোধ নেবে না’। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে, ১৯৯০-এর দশকের নৃশংসতার পর তালেবান খুব সামান্যই বদলেছে।

জাতিসংঘকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহকারী আরএইচপিটিও-নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসিস নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এক গোপন নথিতে সতর্ক করে জানিয়েছে—তালেবান ন্যাটো বাহিনী বা সাবেক আফগান সরকারের পক্ষে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের নিশানা করছে।

আরএইচপিটিও’র ওই প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান নেলম্যান বলেন, ‘তালেবান বর্তমানে যাদের নিশানা করছে, তাদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এই হুমকির বিষয়টি স্পষ্ট।’

‘লিখিতভাবে বলা হয়েছে যে, যদি তারা (তালেবান যাঁদের খুঁজছে) নিজেরা ধরা না দেন, তাহলে তালেবান ওই ব্যক্তিদের পরিবর্তে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও বিচার করবে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে এবং শাস্তি দেবে’, যোগ করেন ক্রিস্টিয়ান নেলম্যান।

এ ছাড়া ক্রিস্টিয়ান নেলম্যান সতর্ক করে বলেন, তালেবানের কালো তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছেন, এবং তাঁদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড দোওয়া হতে পারে।

এদিকে, আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে তালেবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। অন্যদিকে, আসাদাবাদে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

কাবুল থেকে ছেড়ে আসা মার্কিন বিমান থেকে পড়ে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের একজনের নাম জাকি আনোয়ার। ১৯ বছর বয়সী জাকি আফগানিস্তানের জাতীয় যুব ফুটবল দলের হয়ে খেলতেন।

বিদেশি শক্তিধর দেশগুলো তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ১৪ আগস্টের পর থেকে সাত হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পরিস্থিতি এখনও বিশৃঙ্খল। যাঁরা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন, তালেবান তাঁদের বাধা দিচ্ছে।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশুকে বিমানবন্দরে একজন মার্কিন সেনার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, হাজার হাজার মার্কিন সাঁজোয়া যান, ৩০ থেকে ৪০টি উড়োজাহাজ এবং বিপুল সংখ্যক ছোট অস্ত্র এখন তালেবানের দখলে রয়েছে।

বিদেশিরা আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে তালেবান দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে এবং গত রোববার রাজধানী কাবুল দখল করে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে তালেবান গোষ্ঠীটি পিছু হটলেও ২০ বছর পর তারা পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে।

তালেবান এর আগে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া এবং কর্মস্থল থেকে নারীদের নিষিদ্ধ করাসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের বক্তব্যে ছিল সমঝোতার সুর। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, ‘ইসলামের আইনি কাঠামোর মধ্যে’ নারীদের অধিকার ও সম্মান দেওয়া হবে।

তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা নারীদের বোরকা পরতে বাধ্য করবে না। এর পরিবর্তে নারীদের হিজাব বা মাথা ঢাকতে হেডস্কার্ফ পরা বাধ্যতামূলক করা হবে। তালেবান আরও বলেছে যে, তারা নিজ দেশের ভেতরে বা বাইরে কোনো শত্রু চায় না।

এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর সাবেক সদস্য এবং যাঁরা বিদেশি শক্তির পক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা করা হবে বলেও জানায় তালেবান। যদিও আন্তর্জাতিক শক্তির পাশাপাশি অনেক আফগান তালেবানের এমন বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান ছিল।