তৃণমূলে অশান্তি চরমে, নেতারা দুষছেন একে অপরকে

Looks like you've blocked notifications!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি : সংগৃহীত

তৃণমূলে নেতাদের মধ্যে আবারও অশান্তি এখন চরমে। দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই তৃণমূল কংগ্রেসে নেতাদের মধ্যে লড়াই তীব্র হয়েছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তাপস রায়। মুখ্যমন্ত্রীর বিজয়া সম্মেলনে ডাক না পেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন বিধায়ক।

প্রথমে বিধায়ক তাপস রায় তোপ দেগেছেন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, ‘পুজোর সময় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষের বাড়ির পুজোতে গিয়েছিলেন। আর সেখানে তাঁর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী ও কল্যাণ চৌবের কথা হয়েছে।’

তাপসের অভিযোগ, ‘এভাবেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সুদীপ।’

তাপস রায় প্রবীণ বিধায়ক। আগে কংগ্রেস করতেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তৃণমূলে আছেন। সম্প্রতি তিনি আর বিধায়ক পদে না দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাপসের অভিযোগের পরেই তৃণমূলে জলঘোলা শুরু হয়।

বৃহস্পতিবার সুদীপ বলেছেন, তিনি ৭৬ বছর বয়সি তপন ঘোষের পুজোয় গিয়েছিলেন। শুধু তিনি নন, তৃণমূল সাংসদ বিবেক গুপ্তা, নেত্রী শশী পাঁজারাও সেখানে যান। তিনি যখন যান, তখন সেখানে শুভেন্দু ও কল্যাণ ছিলেন না। এমনকি, তপন ঘোষও ছিলেন না।

তমোঘ্ন ঘোষ হচ্ছেন তপনের ছেলে। সুদীপ বলেছেন, তিনি সবার কথার জবাব দেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু বলতে বললে, বলেন। তিনি এই বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না। অর্থাৎ, তিনি যে মমতার নির্দেশে মুখ খুলেছেন, সেই সংকেত দিয়েছেন সুদীপ। এরপরেও তাপস জানিয়েছেন, তিনি যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। তিনি তাঁর কথা ফিরিয়ে নেবেন না।

আরেক বিধায়কের ক্ষোভ শুধু তাপস রায় নন, রাজারহাট এলাকার বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়ও ক্ষুব্ধ। তবে, তার ক্ষোভের কারণ অন্য। সম্প্রতি ইকোপার্কে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়া সম্মেলনী করেছিলেন। সেখানে তিনি গৌতম আদানির ছেলেকে তাজপুর বন্দর তৈরির বরাতও দিয়েছেন।

তাপস চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, তাকে সেখানে না ডাকা নিয়ে। ইকো পার্ক তার বিধানসভা এলাকায় পড়ে। অথচ, বিজয়া সম্মেলনীতে তিনি ডাক পাননি। সেই ক্ষোভ তিনি উগড়ে দিয়েছেন এইভাবে, এটা শুধু তার নয়, নিউটাউনবাসীর অপমান।

তাপস বলেছেন, গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন তিনি বর্তমানে জেলে বন্দি সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, জবাব পাননি। এখন তার প্রশ্ন, তার কাজ বা স্ট্যাটাস কী এই ধরনের অনুষ্ঠানের উপযুক্ত নয়? দলে বাবু ও চাকরের মধ্যে তিনি সম্ভবত দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বলে তিনি মনে করেন।

তাপস চট্টোপাধ্যায় আগে সিপিএমে ছিলেন। তিনি খুবই ভালো সংগঠক এবং যেকোনো সময় কয়েক হাজার মানুষকে জড়ো করে দিতে পারেন। তাপসের সঙ্গে বিধাননগরের সাবেক মেয়র সব্যসাচী দত্তের সম্পর্ক ভালো নয়। সব্যসাচী আবার বিজয়া সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানটা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর এবং নেমন্তন্ন করেছিলেন মুখ্যসচিব। মমতা কী করছেন, মমতা তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে আলাদা একটি বিজয়া সম্মেলনী করেন। সেখানে তিনি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে দেন। সুদীপের স্ত্রী নয়নার সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর এই ইঙ্গিত বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনি সুদীপের সঙ্গে আছেন। আর তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথায় মুখ্যমন্ত্রী যে প্রীত হবেন না, তা বোঝাই যায়। সূত্র জানায়, তিনি বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

অন্য নেতাদের প্রতিক্রিয়া তাপস রায়ের অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘যা বলার তা দলের বৈঠকে বলা উচিত ছিল। বাইরে কেন বলা হলো?’

লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, রাজনীতিতে কিছু নিয়ম মানতে হয়। তাঁর দাদা বিজেপি করেন বলে তিনি দাদার বাড়িতে পর্যন্ত যান না। সৌগতের দাদা তথাগত রায় রাজ্য বিজেপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক রাজ্যপাল।

তাপস চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, তাপস চট্টোপাধ্যায় সিনিয়র নেতা। তিনি দুঃখ পেয়েছেন কোনো কারণে। তবে, বিষয়টি মিটে যাবে। কুণালও তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

কেন এই ঝগড়া? কিছুদিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূল দেখা যাবে। তারপর ব্লক ও জেলায় নেতৃত্বে কিছু পরিবর্তন হলেও তাঁর বেশি কিছু হয়নি।

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘তৃণমূলের অন্দরে এবি লবির কথা শোনা যায়। এবি মানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাও ঠিক সৌগত, কুণাল, তাপস রায়ের সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। কিন্তু তার বাইরে কোনো কথা বলার সময় আসেনি।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা জানিয়েছেন, ‘তাপস রায়ের সঙ্গে সুদীপের ঝগড়া বহুদিনের। ঝগড়াটা উত্তর কলকাতায় প্রভাব বজায় রাখা নিয়ে। তার সঙ্গে অন্যরাও জুড়ে গেছেন। তাঁর মতে, ‘তাপস চট্টোপাধ্যায় অসাধারণ সংগঠক। তাঁর সঙ্গে সব্যসাচীর ঝগড়া। এখন ব্যক্তিগত ঝগড়াঝাটি সামনে এসে পড়ছে।’