দাদিকে বুঝতে দেননি, করোনা আক্রান্ত দাদা মৃত্যুর প্রলাপ বকছেন

Looks like you've blocked notifications!

মৃত্যু যখন প্রায় অনিবার্য, তখন মানুষ চাইতেই পারে তাঁর প্রিয়জন পাশে থাকুক। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সে সুযোগটি যেন একদমই নেই। ধুঁকতে ধুঁকতে একসময় প্রিয়জনের জীবন যখন শেষ দিকে, তখন পরিবার-পরিজনদের প্রলাপ বকতে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই, শেষ সাক্ষাৎ পাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের বাসিন্দা জিয়াও হুয়াংয়ের জীবনে লেখা হয়ে গেল ভিন্ন একটি অধ্যায়। প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে কোনো না কোনোভাবে পাশেই ছিলেন তিনি। আর অন্যদিকে, আরেক প্রিয় মানুষের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যেন নীরবতা ছাড়া তাঁর আর কিছুই করার নেই।

মা-বাবা মারা যাওয়ার পর হুয়াংকে আগলে রেখেছিলেন তাঁর দাদা-দাদি। হুয়াংও চেয়েছিলেন, উপার্জন করলে যতটা সম্ভব দাদা-দাদির জন্য ব্যয় করবেন, যেন বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা নির্ভার হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে হুয়াংয়ের জীবনে এত বড় ধাক্কা আসবে, তা তিনি বোধ হয় কখনোই ভাবেননি। আর এই ধাক্কার মূলে রয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

হুয়াংয়ের দাদা-দাদির মধ্যে গত ২০ জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ কিছুই করার ছিল না তাঁর। ততদিনে উহান পুরোপুরি নিস্তব্ধ শহরে পরিণত, রাস্তাঘাটে চলছে না গাড়ি। পরে ২৯ জানুয়ারি হুয়াংয়ের দাদা-দাদির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর তিন দিন পর হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ পান তিনি।

হাসপাতালে গিয়েই বড় ধরনের পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হয় হুয়াংকে। হাসপাতালের সব বেডই তখন করোনাভাইরাস রোগীতে ভরা। বৃদ্ধ দাদা-দাদির জন্য শত চেষ্টাতেও জোগাড় করতে পারেননি শোবার স্থান। প্রায় ভিক্ষে করার মতো এদিক-ওদিক ছুটে বেড়িয়েছেন বেডের জন্য। আর হাসপাতালের করিডোরে বসে তীব্র জ্বরে কাতরাচ্ছিলেন তাঁর দাদা-দাদি।

হাসপাতাল থেকে বলা হয়, করিডোরেই যেন শুয়ে থাকেন হুয়াংয়ের দাদা-দাদি। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ওই মুহূর্তে জীবনের শেষ পর্যায়ে গিয়ে তাঁর দাদা অনবরত প্রলাপ বকতে শুরু করেন। ওই সময় হুয়াং তাঁর দাদির সঙ্গে কথা বলতে থাকেন, যেন তিনি টের না পান তাঁর জীবনসঙ্গীর কষ্টের সময়।

হুয়াংয়ের দাদার মৃত্যু হয় ওই দিন রাতেই। মৃত্যুর ঠিক তিন ঘণ্টা আগে তাঁর জন্য একটি বেড পাওয়া যায়। আর দাদার মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজের কথা না ভেবে পাশেই ছিলেন হুয়াং।

সেই মুহূর্তের পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে হুয়াং চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবোতে লেখেন, ‘পাশে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না, ছিলেন না কোনো নার্স। চিকিৎসক আর নার্স ছাড়া পুরো হাসপাতাল যেন কবরস্থানের মতো লাগছিল।’ হুয়াং লেখেন, ‘দাদা, শান্তিতে ঘুমাও। স্বর্গে কোনো কষ্ট নেই।’

এদিকে হুয়াংয়ের দাদিও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। হুয়াং যতটা সম্ভব দাদির পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।

হুয়াং লেখেন, ‘কোনো কার্যকর ওষুধ নেই। চিকিৎসকরা আমাকে বলেছেন, আশা না রাখাই ভালো। আমরা কেবল ভাগ্যের ওপরই নির্ভর করতে পারি।’

এরই মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শরীর ভালো যাচ্ছে না হুয়াংয়ের। আর তাই তাঁকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে (আলাদা করে রাখা)। দাদা-দাদির এমন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকেও যেন সঁপে দিয়েছেন তিনি। আর তাই হুয়াংয়ের জীবনে কী ঘটতে চলেছে, তা জানে না কেউ।