দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্য, সরানো হচ্ছে বাসিন্দাদের

Looks like you've blocked notifications!
যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যে তীব্র দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। ছবি : রয়টার্স

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যে দেশটির বৃহত্তম সক্রিয় দাবানলে পুড়ে গেছে তিন হাজার একরেরও বেশি এলাকা। অঙ্গরাজ্যের হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিতে হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

অরেগনের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই দাবানল মোকাবিলা করছেন দুই হাজারেরও বেশি অগ্নিনির্বাপণকর্মী।

গত ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়ার পর অরেগনের এই দাবানলে পুড়ে যাওয়া এলাকার আয়তন লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের চেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে অরেগনসহ ১৩ অঙ্গরাজ্যে ৮০টিরও বেশি বড় ধরনের দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র দাবদাহ ও প্রবল বায়ুপ্রবাহের কারণে এসব দাবানল মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

‘বুটলেগ ফায়ার’ নামের এই দাবানল অরেগনের অন্তত দুই হাজার বাসিন্দাকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। এসব বাসিন্দার বেশির ভাগ থাকতেন অঙ্গরাজ্যটির গ্রামীণ অঞ্চলে। দাবানলে কমপক্ষে ১৬০টি বাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অরেগনের অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকার এক-চতুর্থাংশে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

অঙ্গরাজ্যের অপারেশন্‌স বিভাগের প্রধান জন ফ্লানিগান গত রোববার মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবহাওয়া সত্যিই আমাদের প্রতিকূলে। তীব্র গরম পড়বে, আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাবে, আর  অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বায়ুপ্রবাহ। আর, এই সবকিছু উত্তাপ দ্রুত বাড়তে রসদ জোগায়।’

পোর্টল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্বে ৩০০ মাইল (৪৮০ কিলোমিটার) এলাকা পুড়িয়ে দেওয়া দাবানলে ধ্বংস হয়ে গেছে ১৬০টির বেশি ভবন। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও হাজার হাজার ভবন।

ক্লামাথ জলপ্রপাত, রেডমন্ড শহরসহ বেশ কয়েকটি শহরের বাসিন্দাদের জন্য দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় খুব একটা সহায়তার আভাস দিচ্ছে না। কারণ, এ সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি বেশি থাকবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এবং এর সঙ্গে খরা তো রয়েছেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টারএজেন্সি ফায়ার সেন্টার বলছে—দাবানলের থাবায় এরই মধ্যে এ বছর সে দেশের ১২ লাখ একরের বেশি অঞ্চল তছনছ হয়ে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো। সংস্থাটি ২০২১ সালে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে, যে সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

শুধু ক্যালিফোর্নিয়াতেই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর পাঁচগুণ বেশি এলাকা পুড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে দাবানলের মৌসুমে সচরাচর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের চেয়ে এ বছরের দাবানল বেশ বড় আকারে শুরু হয়েছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ডভাঙা দাবদাহ।

এদিকে বিবিসি বলছে, বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন—কয়েক বছরের খরার কারণে এ বছর উত্তর আমেরিকার দাবানল মৌসুম তীব্রতার দিক থেকে ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারে।

অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন—জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে, যা দাবানল সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করে।

শিল্পযুগ শুরু হওয়ার পর থেকে এরই মধ্যে বিশ্বের উষ্ণতা প্রায় ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এবং যতদিন না বিশ্বের দেশগুলোর সরকার কার্বণ নিঃসরণের মাত্রা একেবারে কমিয়ে আনছে, ততদিন পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তেই থাকবে।