দিল্লিতে মার্কিন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, যুদ্ধ বন্ধের অনুরোধ
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি২০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে মুখোমুখি আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে কখনও আলোচনায় বসেননি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ বৈঠকে তারা দুজনেই ছিলেন। কিন্তু লাভরভ কক্ষ ত্যাগ করায় আলোচনার সুযোগ ছিল না। তবে, এবার সেটা সম্ভব হলো দিল্লিতে। একটু হলেও বরফ গললো। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ বৈঠকে রাজি হন।
বৈঠক চলেছে ১০ মিনিটের মতো। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এই বৈঠক হয়েছে।
ব্লিংকেন পরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তিনি রাশিয়াকে অবিলম্বে আগ্রাসন বন্ধের অনুরোধ করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন। রাশিয়া যাতে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি নিউ স্টার্ট নিয়ে আলোচনায় বসে সেই অনুরোধও করেছেন তিনি।
এ ছাড়া রাশিয়ার জেলে বন্দি মার্কিন নাগরিক পল হোয়েল্যানকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধও করেছেন ব্লিংকেন।
ব্লিংকেন ও লাভরভের এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল না। এটা জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের অংশও ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ রাশিয়া মেনে নেওয়ায় এই সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয়।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পার হওয়ার পর দিল্লিতে প্রথমবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যে বৈঠক করলেন, এটা খুবই বড় কূটনৈতিক সাফল্য। দিল্লিতে এই বৈঠক সম্ভব হয়েছে, কারণ ভারতের সঙ্গে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই সম্পর্ক খুব ভালো। ভারতে এই আলোচনা হওয়ার মতো একটা পরিবেশ ও পরিস্থিতি ছিল।
ব্লিংকেন জানান, তিনি লাভরভকে বলেছেন—পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। বিশ্বে কী হচ্ছে তা দেখার দরকার নেই, যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই রাশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চায়। স্নায়ু যুদ্ধ যখন চরমে, তখনও যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এ বিষয়ে আলোচনা করেছে, চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও ব্লিংকেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে আগ্রাসন বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থার জন্য এটা দরকার।’
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর কোনো যৌথ প্রস্তাব নেওয়া হয়নি বা ঘোষণাপত্র জারি করা হয়নি। ব্লিংকেন জানান, রাশিয়া ও চীন বিরোধিতা করায় প্রস্তাব নেওয়া বা ঘোষণাপত্র জারি করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন মত ছিল। কোনোভাবেই এ নিয়ে মতৈক্য সম্ভব হয়নি। যদি সবাই একমত হতো, তাহলে যৌথ বিবৃতি দেওয়া যেত।’