দীর্ঘ হচ্ছে ট্রাম্পের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের পদত্যাগের তালিকা

Looks like you've blocked notifications!
স্টেফানি গ্রিশাম, বেটসি ডেভোস, এলাইনে চাও, এলিনোর ম্যাকক্যান্স-কাটজ, সারাহ ম্যাথিউস, রায়ান টালি, মিক মুলভানি, জন কস্টেলো, ম্যাট পটিঙ্গার, টাইলার গুডস্পিড, রব গ্রিনওয়ে ও আন্না ক্রিস্টিনা নিচেতা। ছবি : সংগৃহীত

ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের তালিকা। মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে গত বুধবার ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকদের হামলার ঘটনার পর একের পর এক পদত্যাগ করছেন ট্রাম্প প্রশাসনের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী এলাইন চাও এবং শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোস। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

পরিবহণমন্ত্রী এলাইন চাও রিপাবলিকান দলীয় সিনেট নেতা মিচ ম্যাকোনেলের স্ত্রী। তিনি ইমেইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা ‘আমাকে এমন গভীরভাবে নাড়া নিয়েছে যে এটাকে আমি দূরে সরিয়ে রাখতে পারছি না।’ এলাইন চাও জানান, আগামী সোমবার থেকে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে।

অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোস ট্রাম্পকে এক চিঠিতে লিখেছেন, ক্যাপিটলে হামলার ‘পরিস্থিতির ওপর যে আপনার বক্তব্যের প্রভাব ছিল, তাতে কোনো ভুল নেই। আর, এটাই আমার মনোভাব পরিবর্তনের কারণ’। বেটসি চিঠিতে আরো জানান, আজ শুক্রবার থেকে তাঁর পদত্যাগ কার্যকর হবে।   

ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে দুই সপ্তাহেরও কম সময়। তাই, ট্রাম্পের বহু সহযোগী কর্মকর্তার পদের মেয়াদও শেষের দিকে। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতীকী বার্তাস্বরূপ পদত্যাগ করেছেন।

তবে ট্রাম্প সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এমন হঠাৎ বিদায় নেওয়ার পেছনে ক্যাপিটলে হামলা করা সমর্থকদের প্রতি ট্রাম্পের প্রেরণাদায়ী মনোভাবের ভূমিকা রয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার পদত্যাগের কারণে ট্রাম্প সমস্যায় পড়তে পারেন। কেননা, ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ দিনগুলোতে যদি কোনো আন্তর্জাতিক সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তাহলে ট্রাম্পকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার মতো লোকের অভাব দেখা দিতে পারে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ের পদত্যাগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট কর্তৃপক্ষ।

হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, গত বুধবার মার্কিন নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-উপদেষ্টা ম্যাট পটিনজার পদত্যাগ করেন। ম্যাট পটিনজার ট্রাম্পের চীন বিষয়ক নীতি নির্ধারণে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন।

ম্যাট পটিনজারের পদত্যাগের পর বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের অন্তত পাঁচ জন জ্যেষ্ঠ পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। পদত্যাগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট ব্যক্তি জানান, পদত্যাগকারীরা জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে ট্রাম্পকে রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, প্রতিরক্ষা নীতি ও গণবিধংসী অস্ত্র বিষয়ের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন।

অপর সূত্র জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজারসের প্রধান টাইলার গুডস্পিডও পদত্যাগ করেছেন।

সর্বশেষ ট্রাম্প যে ২০ জানুয়ারি ‘নিয়মমাফিক ক্ষমতা হস্তান্তরের’ ঘোষণা দিয়েছেন, তা মূলত এই গণপদত্যাগ ঠেকাতেই। ট্রাম্পের এই কৌশলও কাজে দিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প পর্যায়ক্রমে হোয়াইট হাউসে একা হয়ে পড়ছেন। কতিপয় অনুগত কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন ট্রাম্প। এসব কর্মকর্তারাও ট্রাম্পের সামনে পড়তে চাইছেন না। কারণ সামনে দিয়ে গেলেই ট্রাম্প তাঁদের বকাঝকা করছেন।

ট্রাম্পের শীর্ষ চার মন্ত্রীর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিন, ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার ও ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল জেফরি রোজেন হয়তো দায়িত্ব থেকে সরবেন না। সূত্র বলছে, এই চারজন বাদে অন্য মন্ত্রীদের অনেকেই এর মধ্যে পদ ছেড়ে যেতে পারেন।

এদিকে, ট্রাম্পের ইরান বিষয়ক উপদেষ্টা গ্যাবরিয়েল নোরোনহা টুইট করেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকার ক্ষেত্রে ট্রাম্প পুরোপুরি অযোগ্য।’ এই টুইটের পর তাঁকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প।

অন্যদিকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফ স্টেফানি গ্রিশামও বুধবার পদত্যাগ করেছেন। দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিচেতা এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউসও পদত্যাগ করেছেন।