দুজন মিলে ডাবল সেঞ্চুরি, পালন করলেন ৮০তম বিবাহবার্ষিকী!

Looks like you've blocked notifications!

১৯৩৪ সাল, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা ক্লাস। জন হ্যান্ডারসনের বয়স তখন ২১ বছর, আর শার্লোট পেরিয়েছেন ২০। ক্লাসের মধ্যে হুট করেই শার্লোটের পেছনে গিয়ে বসেছিলেন জন। কিছুটা আড়চোখে তাকাতেই লজ্জা পান শার্লোট। জনের মনে তখন কী ঘটছিল, তা আঁচ করতে পারেননি তিনি। শুরুটা সেখান থেকেই।

এরপর ধীরে ধীরে প্রেম, আর সেখান থেকেই বিয়ে। এখন সেই সাদাকালোর দম্পতি রঙিন দুনিয়ায় পেরিয়েছেন ১০০ বছর। জনের বয়স ১০৬, আর শার্লোটের ১০৫ বছর। দুজন মিলেই করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। তবে সেই সাদাকালোর স্মৃতি এখনো ধরে রেখেছেন তাঁরা। ৮০ বছরের বিয়ের জীবনে এখনো সে সময়ের কথা মনে করে হাসেন এই দম্পতি। এরই মধ্যে পৃথিবীতে এ সময়ের সবচেয়ে বয়স্ক দম্পতির খেতাব পেয়েছেন তাঁরা। নাম লেখান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে। সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই দম্পতির কথা।

শার্লোট জানান সেই প্রথম স্মৃতির কথা, ‘আমার দিকে ওভাবে তাকানোর পর আমি মোটেই রেগে যাইনি তখন। তাঁকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম।’

জন হ্যান্ডারসনের জন্ম ১৯১৩ সালে টেক্সাসের ফোর্ট ওর্থ এলাকায়। আট বছর বয়সে প্রথমবার রেডিও শোনেন তিনি। জানালেন, ‘আমাদের এক প্রতিবেশী রেডিও নিয়ে এসেছিলেন। এখনো মনে আছে, ওই রেডিওর অ্যান্টেনা ছিল বিশাল। রেডিওর শোয়ের সংযোগ পেতে উঠোনের সামনে রাখতে হতো সেটিকে।’

১৯৩০ সালে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে অস্টিনে আসেন জন। তখন অস্টিনে ৫৩ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। আর এখন দুই মিলিয়ন।

হ্যান্ডারসন রোমন্থন করলেন সে সময়ের কথা। বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই এক ব্যক্তি গরু আর মুরগি পালতেন। এখনকার সময়ে তা কল্পনার অতীত। এই এলাকায় এখন কেউ গরু বা মুরগি পালবে, তা আমরা ভাবতেই পারি না। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও অনেক বড়।’

অন্যদিকে, শার্লোটের জন্ম হয়েছিল ১৯১৪ সালে, লোয়া অঙ্গরাজ্যে। তাঁর বয়স যখন ২০, এক বিমান দুর্ঘটনায় বড় বোনের স্বামী মারা যান। পরে শার্লোটের পরিবার খুঁটি গাড়েন টেক্সাসে।

একপর্যায়ে এসে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন শার্লোট। এরপর সাক্ষাৎ হয় জন হ্যান্ডারসনের সঙ্গে। শার্লোট হতে চেয়েছিলেন শিক্ষক, আর জন ডুবে থাকতেন ফুটবলে। খেলতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লংহর্নস দলের হয়ে। এরই মধ্যে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত সাবেক ফুটবলার হিসেবে খেতাব পেয়েছেন জন।

প্রেম শুরু করলেও বিয়ে করার জন্য বেশ খানিকটা সময়ই নেন শার্লোট। এরই মধ্যে তোড়জোড় শুর করে দেন জন। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন তাঁরা। আর এরপর দুজনই এক সঙ্গে পার করে দিলেন ৮০টি বছর। এখনো প্রাণবন্ত জীবনযাপন করছেন এই দম্পতি।

দুজনই জানান, তাঁদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা হয়েছিল স্যান অ্যান্টোনিওতে। সেখানে একটি হোটেলে সাত ডলার খরচ করে রাত্রীযাপন করেছিলেন তাঁরা। এরপর জীবনের অনেকটা সময়ই ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবে দীর্ঘ সময়ের এই জীবনে কোনো সন্তান নেননি এই দম্পতি। জন হাসতে হাসতে বলেন, হয়তো এজন্যই এতটা বছর বেঁচে রয়েছেন তাঁরা।

এই বয়স্ক দম্পতির বাস টেক্সাসের লংহর্ন গ্রামে। এই দম্পতি জানান, স্বাস্থ্যের দিক থেকে এখনো বেশ সুস্থই রয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যেই জীবন অতিবাহিত করছেন।

দুজনের এত বছর কাটিয়ে দেওয়ার রহস্য জানতে চাইলে জন জানান, পরিমিত জীবনযাপন করতে হবে। এ ছাড়া একে অন্যের প্রতি সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। তা ছাড়া ব্যায়ামেরও বিকল্প নেই।