‘দুশ্চিন্তা তাড়াতে’ মনিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, বললেন ক্লিনটন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/03/07/clinton-monica.jpg)
নিজের উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা তাড়ানোর জন্য মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, এমনটাই দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
ক্লিনটনের স্ত্রী এবং ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র সিরিজ ‘হিলারি’তে উঠে এসেছে হোয়াইট হাউসের সাবেক শিক্ষানবিশ মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিল ক্লিনটনের বক্তব্য। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে হোয়াইট হাউসের ২২ বছর বয়সী শিক্ষানবিশ মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তদন্তে মিথ্যা বলার অভিযোগে ১৯৯৮ সালে অভিসংশিত হন বিল ক্লিনটন। পরে সিনেটের বিচারে দায়মুক্তি পেয়ে যান তিনি।
‘হিলারি’ প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাতা সংস্থা হুলুকে বিল ক্লিনটন বলেন, ‘আমি যা করেছি, খারাপ করেছি। কিন্তু ব্যাপারটি এমন ছিল না যে ভাবলাম কোন কাজটা করতে পারলে সবচেয়ে বোকামির পরিচয় দেওয়া হবে, আর সেটাই করে ফেললাম।’
কোন পরিস্থিতিতে মনিকার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ক্লিনটন বলেন, ‘বিষয়টাকে এভাবে বলা যেতে পারে যে—আপনি ১৫ রাউন্ডের কোনো প্রতিযোগিতার পুরস্কার জেতার জন্য লড়ছেন। লড়াইটার সীমা বাড়িয়ে ৩০ রাউন্ড করা হলো। আপনি হতভম্ব হয়ে পড়লেন। সে সময় লড়াই থেকে মনকে কিছু সময়ের জন্য অন্যদিকে সরানোর উপায় হিসেবে সামনে কিছু একটা পেলেন। সবার জীবনেই চাপ, হতাশা, আতঙ্ক বা এমন কিছু ব্যাপার থাকে, যা কাটানোর জন্যই এমনটা (মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক) করেছি।’
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে বিল ক্লিনটনের সম্পর্ক ছিল গণমাধ্যমের জন্য বড় খবর।
মনিকার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ১৯৯৮ সালে গণমাধ্যমের নানা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমার সঙ্গে ওই নারীর (মনিকা লিউনস্কি) কোনো যৌন সম্পর্ক ছিল না।’ ক্লিনটনের ওই কথা মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে স্মরণীয় উক্তিগুলোর একটি বলে গণ্য হয়।
পরে অবশ্য তা স্বীকার করে ক্লিনটন বলেন, মনিকার সঙ্গে তাঁর ‘অসঙ্গত অন্তরঙ্গ শারীরিক সম্পর্ক’ ছিল।
মনিকা লিউনস্কি বরাবরই বলেছেন বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা সম্মতির ভিত্তিতেই হয়েছিল। কিন্তু সম্পর্কটা ছিল মনিকার ভাষায় ‘ক্ষমতার চরম অপব্যবহার’।
জনপ্রিয় মাসিক ম্যাগাজিন ভ্যানিটি ফেয়ারকে ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে মনিকা বলেছিলেন, “তার (বিল ক্লিনটন) ক্ষমতাশালী অবস্থানের সুরক্ষায় আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছিল। ক্ষমতার ‘অপব্যবহার’ এভাবেই করা হয়।”
মনিকা বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ‘পরিণতি কী হতে পারে, তা ঠিকঠাক বোঝার মতো’ অবস্থা সে সময় তাঁর ছিল না। ওই সম্পর্ক নিয়ে অনুশোচনায় ভুগতেন বলেও জানিয়েছিলেন মনিকা।
এদিকে ‘হিলারি’ প্রামাণ্যচিত্রে বিল ক্লিনটন বলেন, তাঁর ও মনিকার সম্পর্কটা যেভাবে মনিকার নামের সঙ্গে স্থায়ীভাবে জড়িয়ে গেছে, তাতে তিনি ‘খুব কষ্ট’ পান।
ক্লিনটন বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে চেয়েছি সে (মনিকা) যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনের সংজ্ঞাটা কী হবে, তা আপনাকে ঠিক করতে হবে।’
স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হিলারি ক্লিনটনের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছিল জানতে চাওয়া হলে হিলারি বলেন, “প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। ওকে (বিল ক্লিনটন) বলেছিলাম, ‘ব্যাপারটা বিশ্বাসই করতে পারছি না, আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না তুমি মিথ্যা বলেছ।’ আমার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। আমি (তাকে) বলেছিলাম, ‘যদি ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়, (কী হয়েছে সেটি) তুমি চেলসিকে (ক্লিনটন দম্পতির মেয়ে) জানাবে।’”
মনিকার সঙ্গে ক্লিনটনের সম্পর্কের ব্যাপারে জানার পর কীভাবে ‘স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যায় হিলারি বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিই। আমার মনে হয়, কিছু মানুষ হয়তো আমার সিদ্ধান্তকে ঠিক ভেবেছে, আর কিছু মানুষ ভেবেছে আমার সিদ্ধান্তটা ভুল।’
ক্লিনটন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতাদের জানান, মনিকার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মেয়ে চেলসিকে বলাটা ছিল ‘ভয়াবহ’ একটা ব্যাপার।