নতুন নিষেধাজ্ঞা দিলে দুদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে : বাইডেনকে সতর্কবার্তা পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বের দুই অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ফোনালাপ হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার সেনা সমাবেশকে নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনকে নিয়ে সংকট সম্প্রতি আরও গভীর হয়েছে। কারণ, ক্রেমিলন নিরাপত্তার বাড়তি নিশ্চয়তা চাইছে এবং নিজেদের দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকফ বলেছেন, পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কিংবা ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মার্কিন হুমকির কথা গতকালের ফোনালাপে জো বাইডেন আবারও নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে ইউরি উশাকফ বলেন, ‘এটি হবে বড় ধরনের ভুল, যার পরিণতি হবে মারাত্মক।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপটি ১০ জানুয়ারি জেনেভায় অনুষ্ঠাতব্য উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনার আগেই অনুষ্ঠিত হলো।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃহষ্পতিবারের ফোনালাপ শুরু হয় ওয়াশিংটন সময় বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে এবং শেষ হয় ৫০ মিনিট পরে মস্কোর সময় মধ্যরাতের পর। দুই নেতার মধ্যে এ মাসে এটি ছিল দ্বিতীয় ফোনালাপ।
রাশিয়া পরিষ্কার করেই বলেছে—তারা লিখিত প্রতিশ্রুতি চায় যে, ইউক্রেনকে কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে অনুমতি দেওয়া হবে না এবং ওই জোটের সামরিক সাজসরঞ্জাম সাবেক সোভিয়েত প্রদেশে মোতায়েন করা হবে না। বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে—রাশিয়ার এ দাবিগুলো কার্যকর হতে পারে না।
দুই নেতার ফোনালাপের আগেই হোয়াইট হাউস জানায়, রাশিয়া যদিও প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেনের দিকে নিয়ে এসেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে দাবি আদায়ের জন্য এ সংখ্যা আরও বাড়াতে পারে, তবুও বাইডেন পুতিনকে বলবেন যে, কুটনৈতিক পথ খোলা রয়েছে। ওই দাবিগুলো জেনেভা বৈঠকে আলোচনা করা হবে। তবে, এটা এখনও পরিষ্কার নয় যে, এ সংকট মোচনের জন্য বাইডেন পুতিনকে কী ধরনের ছাড় দিতে পারেন।
নিরাপত্তা বিষয়ে খসড়া নথিপত্রে মস্কো দাবি করেছে—ন্যাটো যেন ইউক্রেনের সদস্যতার আবেদন নাকচ করে দেয় এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ থেকে তাদের সৈন্য সরিয়ে নেয়।
ইউক্রেনের ব্যাপারে পুতিন যে ধরনের নিশ্চয়তা চাইছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা তা নাকচ করে বলেছে যে, ন্যাটোর নীতি হচ্ছে—উপযুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে সদস্য পদ দিতে তারা প্রস্তুত। তবে, রাশিয়ার উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে তারা রাজি হয়েছে।
বাইডেন এ সপ্তাহটি তার নিজের অঙ্গরাজ্য ডেলাওয়ারে কাটাচ্ছেন। তিনি উইলমিংটনের কাছে তাঁর বাড়ি থেকে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেন।
ফোনালাপের আগে পুতিন নববর্ষ এবং বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাইডেনকে টেলিগ্রাম পাঠান। অন্যান্য নেতাকে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তার সঙ্গে এটিও ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাইডেনকে পাঠানো ওই বার্তায় পুতিন লেখেন, ‘আমি নিশ্চিত, জুন মাসে জেনেভায় শীর্ষ বৈঠকে নেওয়া আমাদের সমঝোতা এবং পরবর্তী যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি এবং পারস্পরিক সম্মান এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কার্যকরভাবে রুশ-মার্কিন সংলাপ শুরু করতে পারি।’