নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল ভারতের একাধিক রাজ্য

Looks like you've blocked notifications!
গুয়াহাটির রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের অবস্থান। ছবি : সংগৃহীত

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরের পর বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (বর্তমানে আইন) প্রতিবাদে ভারতের আসাম রাজ্যের বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীরা বিলটি অসাংবিধানিক হিসেবে উল্লেখ করে তাঁদের রাজ্যে আইনটি কার্যকর না করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া চলমান বিক্ষোভ সামনে রেখে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আসন্ন ভারত সফর বাতিল করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিক করতে গত বুধবার রাজ্যসভায় ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। এর পর বৃহস্পতিবার ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাতে স্বাক্ষর করে বিলটি আইনে পরিণত করেন।

এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চারটি রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মণিপুর ও ত্রিপুরায় বসবাসকারী মুসলিমসহ আদিবাসীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

চা শিল্পের জন্য বিখ্যাত আসামে বসবাস করে ৩৫ লাখের বেশি মুসলিম। এর আগে আসামে এনআরসি বা নাগরিক তালিকায় বাদ পড়েছে রাজ্যটিতে বসবাস করা ১৯ লাখ মানুষ। তাই বিলটি উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই আসামজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ। এর মোকাবিলা করতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল রাজ্যসভায় পাসের আগেই আসামে কারফিউ জারিসহ হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছিল সরকার। এমনকি ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবুও হাজারো মানুষ কারফিউ অমান্য করেই রাজধানী গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভরত ওই মানুষদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছে। আসামের ডিব্রুগড়ে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল এবং খাদ্যমন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাড়িতে হামলা হলে পুলিশে গুলিতে অনেকেই আহত হয়।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য মেঘালয়ার শিলংয়েও কারফিউ জারির পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়েছে। কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভকারীরা বৃহস্পতিবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ও কয়েকটি গাড়ি ও দোকানপাটে আগুন দিয়েছে। এ ছাড়া শিলং থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে উইলিয়ামনগরে মুখ্যমন্ত্রী কর্নাড সাংমার বাড়ি ঘেলাও করেছে বিক্ষোভকারীরা।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য ত্রিপুরায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় ধর্মঘট চলছে। দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে যুব কংগ্রেস। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়া ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি অসাংবিধানিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মমতা বলেছেন, তাঁর রাজ্যে আইনটি কার্যকর করতে দেবেন না।

মমতা বলেন, ‘কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়া বলেছেন, এই বিল ভারতের অসাম্প্রদায়িক নীতির বিচ্যুতি।’

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং বলেন, ভারতে বসবাসকারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরির এই বিলটি অবৈধ ও অনৈতিক। পাঞ্জাব অ্যাসেমব্লিতে প্রতিরোধ করারও ঘোষণা দেন তিনি।

ভারতজুড়ে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি এড়াতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আসন্ন ভারত সফর বাতিল করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জাপানি সংবাদ সংস্থা জিজি প্রেসের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলার মধ্যে ভারতে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে দেখছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।