নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার ‘মিথ্যাচারের’ নিন্দা ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

Looks like you've blocked notifications!
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া। ছবি : সংগৃহীত

সাম্প্রতিক একটি নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র মিথ্যাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন  ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তির জেরে ফ্রান্স অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ‘কথায় ও কাজে মিল না রেখে পাস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কের অবমাননার মতো বড় ধরনের গর্হিত কাজ’ করেছে বলে অভিযুক্ত করেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া। ফ্রান্স২ টেলিভিশনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

‘এইউকেইউএস’ বা ‘অকাস’ (AUKUS)  নামের সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরির প্রযুক্তি পেতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।

নতুন চুক্তিটির কারণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের পূর্বস্বাক্ষরিত বহু বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাক্ষাৎকারে বলেন, মিত্র দেশগুলো মধ্যে ‘গুরুতর সংকট’ চলছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শের জন্য ডেকে পাঠিয়েছি, যা গুরুতর রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এতেই বোঝা যাচ্ছে, আমাদের মধ্যে বর্তমানে যে সংকট রয়েছে তার মাত্রা কতটা।’

ফরাসি রাষ্ট্রদূতদের ‘পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়ন’ করার জন্য ডেকে আনা হচ্ছে বলে জানান ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে, ফ্রান্স যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার ‘কোনো প্রয়োজন’ দেখেনি বলে জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাজ্য ‘বরাবরই সুবিধাবাদী’ বলে তিনি অভিযোগ করেন।

‘এই গোটা ব্যাপারটিতে (চুক্তি স্বাক্ষর) যুক্তরাজ্যের ভূমিকা কিছুটা তিন নম্বর চাকার মতো’, বলেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার পর কেন চটেছে ফ্রান্স?

চীনকে মোকাবিলা করতে তিনটি প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে ‘অকাস’ নামের একটি নিরাপত্তা চুক্তির কথা ঘোষণা করার কয়েক দিনের মধ্যেই তা বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

‘ঐতিহাসিক’ এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের জন্য উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহ কথা বলা হয়েছে।

পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শক্তিধর সদস্য ফ্রান্স ত্রিদেশীয় ‘অকাস’  চুক্তির কঠোর সমালোচনা করেছে। চুক্তির তীব্র নিন্দা করে ফ্রান্স বলেছে, এর মাধ্যমে তাদের ‘পিঠে ছুরি মারা হয়েছে’।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এরকম একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্যারিস প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছে।

পশ্চিমা কোনো মিত্র দেশ থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। এবং এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্রান্স তাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠাল।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইভ লু দ্রিয়া গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অনুরোধে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে পেছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে। যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে মিত্র দেশ ও অংশীদারদের মধ্যে এমন আচরণের বিষয় রয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের জোটগুলোর যে লক্ষ্য, অংশীদারত্বের ওপর এর প্রভাব পড়বে।’

‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপন করেছিলাম। অস্ট্রেলিয়া সে বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে’, বলেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের অনেকেও নতুন এই সমঝোতার সমালোচনা করছেন। এবং এর নামের উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে জোটটিকে ‘অকওয়ার্ড’ বা ‘বেমানান’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

চীনও এই উদ্যোগের সমালোচনা করে একে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা’ বলে উল্লেখ করেছে।

কী আছে ‘অকাস’ চুক্তিতে?

মূলত বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্যই নতুন এই ‘অকাস’ চুক্তি করা হয়েছে। ওই অঞ্চলে বহু বছর ধরেই সংকট বিরাজ করছে, এবং এর জের ধরে উত্তেজনাও চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন গত বুধবার ‘অকাস’ চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। তিন নেতার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অকাসের আওতায় প্রথম উদ্যোগ হিসেবে আমরা পরমাণু-চালিত সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জনে সহায়তায় অঙ্গীকার করছি। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতায় এবং আমাদের যৌথ স্বার্থের সহায়তায় মোতায়েন করা হবে।’

নবগঠিত ‘অকাস’ চুক্তিভুক্ত তিনটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে পরমাণু শক্তি-চালিত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে প্রযুক্তি সরবরাহ করার কথা বলা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে অ্যাডিলেডে এসব সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটে কর্মরত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মাইকেল শোব্রিজ বলেছেন, ‘একটি পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রচণ্ড সক্ষমতা রয়েছে। এর ফলে কোনো অঞ্চলে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বিশ্বের মাত্র ছয়টি দেশের পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে।’

অস্ট্রেলিয়ার জন্য সাবমেরিন নির্মাণের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে ‘অকাস’ চুক্তিতে।

ফ্রান্স কেন ক্ষুব্ধ?

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন উদ্যোগে ক্রুদ্ধ হয়েছে ফ্রান্স। কারণ, তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাদের পূর্ব-স্বাক্ষরিত বহু কোটি ডলারের একটি সমঝোতা বাতিল হয়ে গেছে।

অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে ২০১৬ সালে তিন হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের একটি চুক্তি সই হয়েছিল, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়ার জন্য ১২টি সাবমেরিন নির্মাণ করার কথা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিবিসির সংবাদদাতা বারবারা প্লেট-আশার বলছেন, ‘অকাস’ চুক্তিটি ফ্রান্সের জন্য একদিকে যেমন অর্থনৈতিক ধাক্কা, তেমনি নতুন এই নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা ফরাসি নেতাদের জন্য বিস্ময়করও। কারণ, এ বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা ছিল না। ‘অকাস’ চুক্তির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রান্সকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়।

বিবিসির বারবারা প্লেট-আশার এ ঘটনার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানোর ঘটনা সম্ভবত নজিরবিহীন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বন্ধু ফ্রান্স। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারাও এ কথা উল্লেখ করেছেন।’

তবে, ফ্রান্স বলছে—অর্থনৈতিক কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়নি। তাদের ক্ষোভের পেছনে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা-জনিত কারণও রয়েছে।

প্যারিস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা হিউ স্কফিল্ড বলছেন, ‘প্যারিস উদ্‌বিগ্ন এ কারণে যে, ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা ও লন্ডনের কর্মকর্তারা তাঁদের ক্ষোভের কারণকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন এবং ফ্রান্সকে ছোট করে দেখছেন।’

‘ফ্রান্স বলছে, সাবমেরিন চুক্তির কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে বলে তারা ক্ষুব্ধ হয়নি। বরং মিত্র দেশ হওয়া সত্ত্বেও, যেভাবে ফ্রান্সকে দৃশ্যপটের বাইরে রেখে তিনটি দেশের মধ্যে গোপনে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তাতে তারা ক্ষুব্ধ’, যোগ করেন হিউ স্কফিল্ড।

বিবিসির সাংবাদিক হিউ স্কফিল্ড আরও বলেন, ‘এ কারণেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ গত শুক্রবার রাতে তাঁর রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফ্রান্স দেখাতে চাইছে যে, এটি তাদের জন্য এটা অনেক বড় একটি বিষয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্রান্সের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’

অকাসের তিনটি দেশের প্রত্যেকটির সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক রয়েছে ফ্রান্সের। বিশেষ করে আফ্রিকার সাহের অঞ্চল, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদ দমনে ফ্রান্স এই তিনটি দেশের সঙ্গে কাজ করেছে।

যুক্তরাজ্য থেকে রাষ্ট্রদূত কেন ডাকা হয়নি?

‘অকাস’ চুক্তির প্রতিবাদে ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরায় ফরাসি রাষ্ট্রদূতদের প্যারিসে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, নতুন এই জোটে যুক্তরাজ্যের জড়িত থাকা সত্ত্বেও লন্ডনে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়নি।

এ বিষয়ে ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ব্যাখ্যায় ফ্রান্সের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই জোটে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খুব গৌণ বলে মনে করে ফ্রান্স।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্রান্স মনে করে ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিশ্বে তার নতুন ভূমিকা নির্ধারণ করা চেষ্টা করছে। এবং এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাজ্যও এখন এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া কী বলছে?

হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ফ্রান্স সরকারের রাষ্ট্রদূত ডেকে পাঠানোর উদ্যোগে বাইডেন প্রশাসন দুঃখপ্রকাশ করে বলেছে, বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে সামনের দিনগুলোতে তারা ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা করবে।

ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি অস্ট্রেলিয়াও। তারা বলছে, ফ্রান্সের এই পদক্ষেপ দুঃখজনক।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেছেন, ফ্রান্সের হতাশ হওয়ার কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন। তবে তাঁরা আশা করছেন, ফ্রান্সও ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্ব অনুধাবন করবে।’

এখানে বলে রাখা ভালো, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্‌বিগ্ন অস্ট্রেলিয়া।

‘অকাস’ চুক্তির ঘোষণা যে সময়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণার ঠিক এক মাস পর অকাসের কথা ঘোষণা করা হলো।

দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে যখন সন্দেহ তৈরি হচ্ছিল, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তার দুটো মিত্র দেশকে পাশে নিয়ে নতুন এই চুক্তির ঘোষণা দেওয়া হলো।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, চীনকে নিশানা করে ‘অকাস’ চুক্তি করা হয়নি।

ইইউ’র প্রতিক্রিয়া

ফ্রান্সের শক্ত অবস্থানের ফলে ইইউ জোট বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।

প্রথমত, ‘অকাস’ন চুক্তির আলোচনায় শুধু ফ্রান্স নয়, ইইউও ছিল না। শুধু যে আলোচনায় ছিল না তা নয়, এ আলোচনার বিষয়েও তারা অবহিতও না।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান এবং শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক জোসেপ বোরেলও অকাসের বিষয়ে কিছু জানতেন না।

এক সংবাদ সম্মেলনে জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘অকাস’ সম্পর্কিত আলোচনায় ইইউ’র অংশগ্রহণ না করা এবং এ বিষয়ে তাদের কিছু অবহিত না করা দুঃখজনক এবং ফরাসি সরকারের জন্য এটা কতটা হতাশাজনক, সেটা তিনি বুঝতে পারেন।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান আরও বলেছেন, ইউরোপের এখন সজাগ হওয়ার সময়, এবং এ বিষয়ে তাদের উদ্যোগ নিতে হবে।

ইইউ কোনো সামরিক শক্তি নয়, কিন্তু তারপরেও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লায়ান ‘ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা জোট’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেসিকা পার্কার বলছেন, ‘ইইউ যদি তার শক্তি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কেন তারা সেটা করছে। এবং এ কাজ করাটা তাদের জন্য সহজ হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে দ্য জার্মান মার্শাল ফান্ড নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়ান লেসার বলেছেন, ‘ওয়ালস, এথেন্স, প্যারিস অথবা বার্লিন—সবার দৃষ্টিতে কৌশল এক রকম হবে না।’

সুতরাং, সংক্ষেপে বলতে গেলে—‘অকাস’ চুক্তি বা জোট গঠনের ঘোষণা ইইউ’র জন্য সময়োপযোগী নয়, এবং তারা যে এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিল, সেটা তাদের জন্য বিব্রতকর।

চীনের বক্তব্য কী?

চীন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু, ‘অকাস’ চুক্তির ফলে এ দুটো দেশের সম্পর্ক যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

চুক্তির তীব্র সমালোচনা করে চীন এ চুক্তিকে ‘চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এবং ‘সংকীর্ণ মানসিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেছেন, এই জোট আঞ্চলিক শান্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করেছে, এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে জোরদার করছে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। এবং ‘অকাস’ চুক্তিকে ‘স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা’ উল্লেখ করে বলেছেন, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেরও ক্ষতি করছে। চীনা গণমাধ্যমগুলোতেও একই মনোভাব ব্যক্ত করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে।