পশ্চিমবঙ্গে দলে দলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন সাংসদ-বিধায়ক
২০২১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। সেই ভোটের মুখে আজ হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজ্যের রাজনীতিতে রীতিমতো ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিয়ে দিল। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ধারণাও বোধহয় ছিল না এমনটা।
শনিবার দুপুরে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সাবেক সভাপতি অমিত শাহের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের মোট ১৪ জন সংসদ সদস্য ও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিলেন। এর মধ্যে শাসকদল তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গেছে ১০ সংসদ সদস্য ও বিধায়ক। জাতীয় কংগ্রেস থেকে দুজন, বামেরা হারিয়েছে আরো দুজন বিধায়ককে।
শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আগেও অনেক নেতা বিজেপিতে গেছেন। তবে এবারে ‘এক ঝাঁক’ ডাকসাইটে আর প্রভাবশালী নেতার দলত্যাগ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জন্য চিন্তার কারণ হতেই পারে। এদিন সংসদ সদস্য আর বিধায়কদের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ও জেলা স্তরের নেতাও। ফলে স্বভাবতই ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে এই দলত্যাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে তৃণমূলের- এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
তৃণমূল, কংগ্রেস আর বামফ্রন্টের নেতাদের নিজের দলে ভিড়ানোর পর মেদিনীপুরের এক জনসভায় দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘এ তো সবে শুরু। এরপর তৃণমূলে শুধু আপনি একাই থাকবেন। আর কেউ থাকবে না।’
এদিন তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যেসব সংসদ সদস্য ও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা হলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারের মন্ত্রিসভার সাবেক প্রভাবশালী সদস্য শুভেন্দু অধিকারী, দীপক হালদার, বিশ্বজিত কুণ্ডু, আশিস দে, বনশ্রী মাইতি, শীলভদ্র দত্ত, দীপালি বিশ্বাস, রঞ্জিত মণ্ডল, অনন্তদেব অধিকারী ও সুনীল মণ্ডল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গেছেন বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় ও বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। আর তাদের সঙ্গে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসিস্ট) সিপিআইএম থেকে বিধায়ক তাপসী মণ্ডল ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) থেকে বিধায়ক অশোক দিন্দাও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ্য করে বিজেপি নেতা অমিত শাহ বলেন, ‘আজ দিদির (মমতা) বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে গোটা বাংলা। বিধানসভা ভোটে বাংলাতে ২০০টির বেশি আসন পাবে বিজেপি।’
‘দিদি বলেছেন, বিজেপি দল ভাঙ্গাচ্ছে। আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনি যে দলটা করেন, সেই দল কোন দল ভেঙে করেছেন?’, যোগ করেন অমিত শাহ। তিনি আরো বলেন, ‘কেন এতো মানুষ আজ আপনার দল ছেড়ে চলে যাচ্ছে তা একবার ভেবে দেখুন। নিজের ভাতিজাকে গুরুত্ব দিয়ে অন্যদের অপমান করছেন। তাই রাজ্যের নেতারা তৃণমূল ছেড়ে পালাচ্ছেন।’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তৃণমূল সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃষক সম্মাননিধির ছয় হাজার রুপি রাজ্যের কৃষকদের পেতে দেয়নি এই সরকার। আয়ুষ্মান ভারতের সুবিধা পেতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী।’
অমিত শাহ আরো বলেন, ‘আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছিলেন, রাজ্য থেকে দুর্নীতি বিদায় করবেন। কিন্তু আম্ফানের ঝড়ের অর্থ নিয়ে আপনি কী করেছেন তা বাংলার মানুষ দেখেছে। আম্ফানের অর্থ তৃণমূল নেতাদের পকেটে ঢুকেছে।’
পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বিজেপির সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘আপনারা এই রাজ্যে কংগ্রেসকে তিন দশক সময় দিয়েছেন। সিপিআইএমকেও তিন দশক সময় দিয়েছেন। তৃণমূলকে দিয়েছেন ১০ বছর। আপনারা বিজেপিকে মাত্র পাঁচ বছর সময় দিন। পশ্চিমবাংলা থেকে মমতা সরকারকে তুলে ফেলে দিন।’