পি কে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরে অভিযান চালিয়ে সুকুমার মৃধা নামের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির বাড়ি থেকে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় সহযোগীসহ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের অর্থ লোপাট মামলার মূল অভিযুক্ত ও পলাতক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) আজ শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। পি কে হালদার নাম পাল্টে শিবশংকর হালদার নামে পশ্চিমবঙ্গে থাকতেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরে সুকুমার মৃধা নামের পি কে হালদারের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির তিন বাড়িতে অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই সংস্থা আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত করে থাকে। অশোকনগরে তিনটি বড় ভবন রয়েছে সুকুমার মৃধার। এলাকাবাসী তাঁকে মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চেনেন। তবে সুকুমার মৃধা বাংলাদেশের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠজন বলে ইডির একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চাইলে আজ শনিবার দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো আমি কোনো তথ্য পাইনি। খোঁজ নিয়ে এবং নিশ্চিত হয়ে এ বিষয়ে পরবর্তীতে জানাবো।
জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) বিরুদ্ধে। তিনি কানাডায় পালিয়ে গেছেন বলে এতদিন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল।
রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) প্রভৃতি। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের অভিযোগ পেয়ে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে হাইকোর্ট। পরে তাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বসে নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমও।
এরইমাঝে পিকে হালদারের সঙ্গে অর্থপাচারে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে সন্দেহভাজন ৮৩ জনের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছে বিএফআইইউ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পি কে হালদারের সহযোগী সন্দেহজনক ৮৩ ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে। পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী ৪৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছে।
বিএফআইইউর ওই তালিকায় নাম আসা সন্দেহভাজন ৮৩ ব্যক্তি হলেন- প্রণবেন্দু হালদার ও লীলাবতি হালদারের সন্তান প্রশান্ত কুমার হালদার, গুলশানের আ. ফয়েজ মুজিবর রহমানের দুই ছেলে রেজাউর রহমান ও মিজানুর রহমান এবং মেয়ে সৈয়দা রুহি গজনভী, গুলশানের সায়েদুর রহমান খানের ছেলে এম. নুরুল আলম, বনানী ডিওএইচএসর শামসুল আলমের ছেলে মো. নওশের উল ইসলাম, তার স্ত্রী মমতাজ বেগম, বনশ্রীর বিমলাংশু চৌধুরী ও আশুতোষ চৌধুরী, বনশ্রীর নারায়ণ মজুমদারের স্ত্রী উৎপলা মজুমদার, বনানী ডিওএইচএসর বাসুদেব ভট্টাচার্য ও তার স্ত্রী পাপিয়া ভট্টাচার্য, পি কে হালদারের ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা, বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের কাজী মমরেজ মাহমুদ ও তার স্ত্রী আফরোজা সুরাইয়া মজুমদার, ঝালকাঠি রাজাপুরের প্রশান্ত দেউড়ি, গেন্ডারিয়ার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উত্তরার স্বপন কুমার মিস্ত্রি ও তার স্ত্রী পূর্ণিমা রাণী হালদার, মিরপুরের অমিতাভ অধিকারী, লালমাটিয়ার রাজিব সোম ও তার স্ত্রী শিমু রায়, পিরোজপুরের রতন কুমার বিশ্বাস।
আরও আছেন গ্রিন রোডের ওমর শরীফ, কুমিল্লার বরুড়ার উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও তার স্ত্রী অনিতা কর, উত্তরার উজ্জ্বল মল্লিক, নড়াইল লোহাগড়ার মোস্তাইন বিল্লাহ, পিরোজপুরের শাহ আলম শেখ, অনঙ্গমোহন রায়, উত্তরার সোমা ঘোষ, বরিশাল বাকেরগঞ্জের অমল চন্দ্র ঘোষ, গাজীপুর কালিগঞ্জের সুবেদ কুমার ভৌমিক, নড়াইলের শেখ মইনুল ইসলাম মিঠু, সঞ্জীব কুমার হালদার, উত্তরার সুব্রত দাশ ও তার স্ত্রী শুভ্রা রাণী ঘোষ, রামপুরা হাজিপাড়ার তোফাজ্জ্বল হোসেন, পিরোজপুরের স্বপন কুমার মিস্ত্রির ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উত্তম কুমার মিস্ত্রির স্ত্রী অতশী মৃধা, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি এবং মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ।
সন্দেহভাজনদের মধ্যে আরও আছেন- বাগেরহাট চিতলমারীর শঙ্খ ব্যাপারি (বর্তমানে গ্রেপ্তার), রামপ্রসাদ রায়, ইরফান উদ্দীন আহমেদ, শাহনাজ বেগম, জামিল মাহমুদ, ইমাম হোসেন, ধানমণ্ডির অভিজিত অধিকারী, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা, ফেনী সদরের একেএম শহীদ রেজা, শওকত রেজা, জোবেদা বেগম, নাহিদ রেজা, একেএম হারুন অর রশিদ, মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, মো. শাহাদাত হোসেন, জামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, রামপ্রসাদ, শাহ্ আবরার ফাইয়াজ, মো. দেলওয়ার হোসেন, মিলন কুমার দাশ, পিরোজপুর সদরের অমলকৃষ্ণ দাস, বাগেরহাট মোড়লগঞ্জের মশিউর রহমান, পিরোজপুর সদরের সাব্বির আহমেদ, মো. মনিরুল ইসলাম, আসমা সিদ্দিক, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সোলায়মান চৌধুরী, মো. কামরুজ্জামান, নিকুঞ্জের মো. ইকবাল সাইদ, সিরাজগঞ্জ বেলকুচির অরুণ কুমার কুন্ডু, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম, এনএম পারভেজ চৌধুরী, প্রশান্ত কুমার হালদারের মা লীলাবতী হালদার, অবন্তিকা বড়াল (বর্তমানে গ্রেপ্তার), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মো. রেজাউল করিম এবং জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালে সত্ত্বাধিকারী ইরফান আহমেদ খান।