প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে ঢাকা-প্যারিস সম্মতিপত্র স্বাক্ষর

Looks like you've blocked notifications!
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতারবিষয়ক সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতারবিষয়ক সম্মতিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমরা করেছি (সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর)। এটি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত।’

মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সরকারি সফরে ফ্রান্সে যান। এ সময় এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করা, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশই প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তা অনুভবে আহ্বান জানালে, নিজেদের সক্ষমতার ভিত্তিতে একে অপরকে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ছাড়া একে অন্যকে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমেও সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

দুই দেশই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে এবং বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফ্রান্স সরকার ও জনগণের সমর্থনের কথা স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় উভয় পক্ষই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করে। দুই দেশই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে সকলের জন্য কল্যাণকর একটি মুক্ত, স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশ কামনা করেন। তারা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বজায় রাখতে এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও সমুদ্র অর্থনীতিতে সহযোগিতার সুযোগ বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে।

জাতিসংঘের কনভেনশন প্রণীত ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইন পালনের পাশাপাশি সমুদ্র নিয়ে বিভ্ন্ন বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, হুমকি বা বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকা প্রভৃতি বিষয়ে ‍নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে।

এ সময় বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে সম্মতি প্রকাশ করে যৌথভাবে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

জাতিসংঘ এক সুপারিশে বাংলাদেশকে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত করার কথা জানানোয় ফ্রান্স বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে শ্রম খাতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করে ফ্রান্স এটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

উভয় দেশই বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উদারীকরণ ও সহজতর করার জন্য তাদের অঙ্গীকার এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকার প্রতি তাদের অঙ্গীকারের ওপর জোর দিয়েছে।

দুই দেশ কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে পারস্পারিক সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

উভয় দেশ একে অপরের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে সহযোগিতা করতে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছে এবং নিজ নিজ শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

তারা কৃষি, অবকাঠামো, পরিবহণ, জ্বালানি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতসহ দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও শিল্প অংশীদারত্ব জোরদার করার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ফ্রান্স ও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় জাতিসংঘে নিজেদের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান দেশ এবং ফ্রান্সও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখে।

দুই দেশ নিজেদের সহযোগিতা বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং কৌশলগত দিক-নির্দেশনার জন্য নিয়মিত রাজনৈতিক পরামর্শের মাধ্যমে অংশীদারত্ব বৃদ্ধি ও বিকশিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

এ ছাড়া রাজনীতি ও কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তাদের দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে।