প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস : চীন থেকে নাগরিকদের ফেরত নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেখান থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজ বুধবার পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে। এ ছাড়া এই ভাইরাসে অন্তত ছয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
জাপানের সংবাদ সংস্থা কিয়োডো নিউজ দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, জাপানের চার্টার্ড বিমানের একটি ফ্লাইট চীনের উহান থেকে ২০৬ জন নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত। জাপানে ফেরত যাওয়ার পরে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে টোকিওর সংক্রামক রোগের বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ওই ফ্লাইটে উহান থেকে জাপানে ফেরত যাওয়া নিপ্পন স্টিল করপোরেশনের টাকিও আওয়ামা নামের এক কর্মী বলেন, ‘চীনে করোনাভাইরাস খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আমাদের ওই শহরে থাকতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল।’ কথা বলার সময় তিনি মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরেছিলেন।
ফেরত আসা আরেক জাপানি নাগরিক টাকায়োকি ক্যাটো জানান, উহান শহর ছাড়ার আগে তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে এবং বিমানে ওঠার পরেও সেখানে থাকা চিকিৎসকরা আবারও তাঁদের তাপমাত্রা মেপে দেখেন।
তাঁরা দুজনই তাঁদের সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা অসুস্থ কাউকে দেখেননি। তারপরেও জাপানে পৌঁছার পর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁদের আরো স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
ওই দুই জাপানি নাগরিক জানান, উহানে বসবাসকারী জাপানের চার শতাধিক নাগরিক নিজ দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছেন।
এদিকে উহান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিয়ে আলাস্কার উদ্দেশে একটি বিমান ছেড়ে গেছে। সেখানে চীনফেরত মার্কিনিদের মধ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ আছেন কিনা, তা যাচাই করা হবে। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে সেখানে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারপর সেখান থেকে বিমানে করে তাঁদের ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ব্রিটিশ সরকার প্রয়োজন ছাড়া চীন ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। আর ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে হংকংয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সব রেল যোগাযোগ ও বিমান চলাচল অর্ধেকে নামিয়ে আনার কথা জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ কেরিয়া তাদের লোকজনকে ফিরিয়ে নিতে বিমান পাঠাবে এবং ফ্রান্স, মঙ্গোলিয়া ও অন্যান্য দেশও চীনে আটকাপড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।
এদিকে করোনাভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে, সে জন্য উহানসহ হুবেই প্রদেশের আরো ১৬টি শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে চীন। যার ফলে সেখানে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ আটকা পড়েছে।
চীনের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহের জন্য জাপান থেকে ২০ হাজার মাস্ক ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্যে চীন আড়াই হাজার শয্যার দুটি আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করছে।